রাত ১১:২৭, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পর্যটন মৌসুমেও খাগড়াছড়িতে পর্যটক সংকট, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়ছড়িতে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও এবার পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়টিকে মূল পর্যটন মৌসুম হিসেবে ধরা হলেও এ বছর মৌসুমের শুরুতেই প্রত্যাশিত ভিড় নেই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

খাগড়ছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝরনা, হর্টিকালচার পার্কসহ জনপ্রিয় বেশ কিছু পর্যটন স্পটে মৌসুমের এই সময়ে সাধারণত পর্যটকে সরগরম থাকে। কিন্তু এবার এসব স্থানে আগের বছরের তুলনায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ীদের বলছেন, পর্যটন নির্ভর ব্যবসা করেন তারা। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আশানুরূপ পর্যটক না আসায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

খাগড়াছড়ি সাজেক পরিবহন কাউন্টারের লাইনম্যান মো. আরিফ জানান, মৌসুমের এ সময় সাধারণত প্রতিদিন ৫০ এর অধিক গাড়ি সাজেকে যাতায়াত করে। কিন্তু এবার সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার মাত্র ১২টি চাঁদের গাড়ি ও সাফারি গাড়ি সাজেক গেছে। শুক্রবার প্রায় ৫০টি এবং শনিবার ১৮টি গাড়ি পর্যটক নিয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি রয়েছে। পর্যটক কম থাকায় অধিকাংশ চালকই বেকার সময় পার করছেন।

হোটেল ব্যবসায়ীরাও একই সংকটে পড়েছেন। খাগড়াছড়ি শহরের হোটেল মাউন্টইনের ব্যবস্থাপক মো. শাকিবুল ইসলাম বলেন, গত বছরের এই সময়ে নিয়মিত পর্যটক ছিল। এ বছর তুলনামূলক কম। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মাত্র চার থেকে পাঁচটি রুম বুকিং ছিল। সাধারণত এই সময়ে কয়েকগুণ বেশি বুকিং থাকে। দৈনিক যে বুকিং হচ্ছে তা দিয়ে হোটেলের খরচই উঠছে না।

অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রশীদ সাগর বলেন, এ বছর এখনও তেমন আগাম বুকিং নেই। বর্তমানে বেশিরভাগ পর্যটক সাজেকেই রাতযাপন করেন। সাজেক থেকে বিকেলে খাগড়াছড়িতে ফিরে আলুটিলা ও হর্টিকালচার পার্ক ঘুরে একই রাতে ফিরে যান। খাগড়াছড়িতে পর্যটক ধরে রাখতে নতুন নতুন পর্যটন স্পট তৈরি করা প্রয়োজন।

শহরের মনটানা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. রুবেল হোসেন বলেন, এ বছর বাজার এলাকায় পর্যটকের উপস্থিতি আগের তুলনায় কম। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি বাজার থেকে সাজেক কাউন্টার সরে যাওয়ায় রেস্টুরেন্টে পর্যটক কম আসছেন। দৈনন্দিন খরচও কষ্টে চলছে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, পর্যটন মৌসুম হলেও খাগড়াছড়িতে পর্যটক আগমন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাইরে থেকে আসা পর্যটক হাতেগোনা কয়েকজন। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে পর্যটক বাড়তে পারে।

এদিকে পাহাড়ে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় চলছে জানিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পর্যটকরা খাগড়াছড়িতে আসতে শুরু করেছেন। সামনে পরীক্ষার মৌসুম শেষ হলে পর্যটন আরও বাড়বে। পর্যটকদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং টুরিস্ট পুলিশ নিয়মিত কাজ করছে। যারা ভ্রমণে আসবেন তারা নিশ্চিন্তে সময় উপভোগ করতে পারবেন।