রাত ১০:৩৪, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মৌলভীবাজারে রাত হলে ফসলি জমিতে শূকরের হানা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারে খাবারের আশায় ফসলি জমিতে নেমে আসে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানের বুনো শূকরেরা। আর এতেই নষ্ট করে ফেলে কৃষি জমির ধান ও বিভিন্ন শীতকালীন সবজিখেত। ফলে ফসল রক্ষায় বাধ্য হয়ে এখন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, শীতের মৌসুমে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়। একই সঙ্গে বনের ভেতরে বিভিন্ন লতাপাতা মরে যায়। ফলে বনের মধ্যে প্রাণীদের খাবার পানি ও খাবার সংকট দেখা দেয়। আর এতে করেই খাবারের খুঁজে বনের প্রাণীরা বেড়িয়ে পড়ে লোকালয়ে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, লাউয়াছড়া বনের অনেক প্রাণীরা লোকালয়ে এসে খাবার সংগ্রহ করে। তবে বছরের এই সময়টাতে বুনো শূকর রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে পাকা ধান ও সবজির খেত নষ্ট করে দেয়। এতে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকেরা ফসল রক্ষারজন্য দলবদ্ধভাবে বাঁশ, টিনের শব্দ এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

লাউয়াছড়া বনের আশেপাশের লংগুরপার, দক্ষিণ বালিগাঁও, বাঘমারা, সরইবাড়ি, ভেড়াছড়া, ছাতকছড়া গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে রাত নামলেই বুনো শূকর হানা দেয়। ফলে কৃষকেরা নিরুপায় হয়ে ফসল রক্ষার জন্য রাতদিন পাহারা দিচ্ছেন এখন।

বনবিভাগ বলছে, বছরের এই সময়টা বুনো শূকর বনের বাহিরে ফসল খাওয়ার জন্য অনেক সময় বেড়িয়ে পড়ে। মানুষের কিছুটা ফসল খেয়ে নষ্ট করে। সেগুলোকে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না।

ফসল রক্ষার জন্য পাহারা দিচ্ছেন এমন কৃষকেরা বলেন, ফসল রক্ষার জন্য শূকর তাড়ানোর চেষ্টা করলে উল্টো মানুষকে ধাওয়া করে। সারা দিন কাজ করে আবার রাত জেগে ফসল পাহারা দিতে হয়। শূকরের হানায় কোন ফসল মাঠে রাখতে পারছেন না। শুধু শূকর নয় বানরের দল এসে ফসলে খেয়ে যায়। ফসলি মাঠে বাঁশ দিয়ে কয়েক ফুট উঁচুতে মাচাং তৈরি করে রাতে পাহারা দেওয়া হয়।

ফসল রক্ষায় রাতে পাহারা দিচ্ছেন কৃষক কনাই মিয়া ও আবুল মিয়া বলেন, আমন ধান কাটার সময় আসলেই শুকরের দল পাকা ধান খেয়ে নষ্ট করে যায়। এজন্য ফসল কাটার আগ পর্যন্ত আমরা পাহারা দিচ্ছি।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান জানান, লাউয়াছড়া বনের প্রাণীরা খাবারের জন্য লোকালয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণীর নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই। আমরা চাইলেও তাদেরকে আটকাতে পারবো না। লাউয়াছড়া বনে আগের তুলনায় গত কয়েকবছরে শূকর ও বানরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণীদের প্রতি সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। কেউ যেন ইচ্ছে করে কোন প্রাণীর ক্ষতি না করে।