বিকাল ৫:৪৬, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছে ৩৫ পরিবার


মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : সংগীত জগতের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামে। এ কারণে গ্রামটিকে ঢোলের গ্রামও বলা হয়। বাপ-দাদাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বাদ্যযন্ত্র তৈরির কলাকৌশল, জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি নিজস্ব ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন দাসপাড়ার ৩৫টি পরিবারের সদস্যরা। ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি তাদের জীবিকা নির্বাহ ও জীবন ধারণের প্রধান মাধ্যম।

তবে আগের মতো জারি, সারি, বিচার ও কীর্তনসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত না হওয়ায় কমেছে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ। প্রতিমাসে ২০ থেকে ৩০টি ঢাক-ঢোল আর ৩০ থেকে ৪০টি তবলা-ডুগি তেরি করতে পারে একটি পরিবার।

জানা গেছে, ঢোলের গ্রামের ঢাক-ঢোল, তবলা-ডুগিসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা বাড়ে গান-বাজনার আয়োজন বেশি হলে। তবে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণেও কাজের চাপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের বড় উৎসব দুর্গাপূজাতে ব্যস্ততা বাড়ে। ৭ থেকে ১৫ দিনে তৈরি করা একটি ঢাকের পেছনে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবলা-ডুগি সেট তৈরিতে খরচ হয় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা আর বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। অন্যদিকে হারমোনিয়াম তৈরিতে খরচ হয় ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা আর বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ। ঢোলের গ্রামে ঢাক-ঢোল, তবলা-ডুগি, খমক, হাত বায়া, খোল ও হারমোনিয়ামসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয়। কেউ তবলা তৈরিতে ব্যস্ত, আবার কেউ ঢাক-ঢোল, কেউ আবার তবলা-ডুগিতে লাগাচ্ছেন মহিষের চামড়া। ঢাকা-ঢোল, তবলা-ডুগি, খমক, হাত বায়া, খোল ও হারমোনিয়ামসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রগুলো তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেগুন, বার্মটিক সেগুন, আম, নিম, কড়ই, কদম, জামরুল ও মেহগনি কাঠ। চামড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মহিষ, গরু ও ছাগলের।

কারিগর সুমন দাস বলেন, বংশপরম্পরায় এই পেশায় জীবিকা ও সংসার চলছে। তবে সরকারিভাবে সহায়তা বা ক্ষুদ্র ঋণ পেলে ব্যবসাকে বাড়াতে পারবেন। তৈরিকৃত এসব বাদ্যযন্ত্র বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা হলে আমাদের আয় রোজগার বাড়তো। এতে সরকার একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো আর অন্যদিকে আমাদের ভাগ্যের চাকাও বদলে যেত।

দাসপাড়ার বাসিন্দা কারিগর প্রাণ কৃষ্ণ দাস বলেন, আগের মতো এখন গান-বাজনার অনুষ্ঠান না হওয়াতে কাজ অনেক কম হয়। তবে পালা, জারি, সারি বা সংগীতের অনুষ্ঠান বেশি হলে আমাদের কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের সবচেয়ে বেশি কাজের অর্ডার পাই দুর্গাপূজার সময়। এ ছাড়া সারা বছরই কম-বেশি আমাদের কাজ থাকে।

ঢাক তৈরির কারিগর রাজ কুমার দাস বলেন, কাঠ, চামড়াসহ ঢাক-ঢোল তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দামও আগের থেকে এখন বেশি দামে কিনতে হয়। একটি ঢাক-ঢোল তৈরি করতে আমাদের খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আর বিক্রি করি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। যা লাভ হয় তা দিয়েই আমাগো সংসার চলে। বাপ-দাদার কাছ থেকে এই কাজ শিখেছি, অন্যকাজ তো আর শিখতে পারি নাই। তবে নিজের তৈরি বাদ্যযন্ত্র যখন দেখি কোনো অনুষ্ঠানে বাজানো হচ্ছে, তখন খুব ভালো লাগে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা-তুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি শুনলাম, ঢোলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত দাসপড়া গ্রাম অবশ্যই পরিদর্শনে যাব। সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে থেকে তাদেরকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।