সকাল ৭:২৯, ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক ফ্যাসিবাদ এখনো রয়ে গেছে। আমাদের এখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করতে হবে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের ডা. শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষে মাকাম: সেন্টার ফর সুফি হেরিটেজ এই সংলাপের আয়োজন করে।
ইমরান হুসাইন তুষার এবং মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম।
এ সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন, দ্য ডিসেন্ট সম্পাদক ও ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশির, কবি ও ক্রিটিক ইমরুল হাসান, লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ, লেখক ও গবেষক তাহমিদাল জামি, গবেষক ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বাহাছ পত্রিকার সম্পাদক জোবাইরুল আরিফ, লেখক ও আলেম ইফতেখার জামিল, লেখক ও আলেম ওমর ফারুক ফেরদৌস, সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত, কবি ও লেখক রাফসান গালিব, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সেলিম খান, সেন্টার ফর ইসলামিকেট বেঙ্গল এর রিসার্চ লিড আহমেদ দীন রুমি, কবি ও লেখক সৈয়দুল হক, সমাজসেবী ও সংগঠক মুহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও কানজুল হিকমা রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক সুলতান মাহমুদ সোহেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক কী-নোট পেপার উপস্থাপন করা হয়। পেপারে বলা হয়, মাজার সংস্কৃতি বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। বাংলাদেশের জনগণ, সমাজ ও সংস্কৃতিরই একটি অনুষঙ্গ। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গটি ধারাবাহিক ও সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণের শিকার হয়ে বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। কেবল সুফি-সমাজ নয়, বরং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ও তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের ওপর এ আঘাত কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
এতে আরও বলা হয়, সুফি-সমাজ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজ সবাই চলমান সহিংসতার সমাপ্তি চাইছেন এবং একটি সমাধানের পথ খুঁজছেন। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে এই সমাধান অত্যন্ত জরুরি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট পরবর্তী সারাদেশে মাজারে সহিংসতা বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যারা ইসলামের নামে রাজনীতির চর্চা করেন তারা হাজার বছর ধরে যে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে তাতে ভ্রূক্ষেপ করেননি। যে কারণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দলের সংশ্লেষও জড়িত। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক আলোচনার জায়গায় ধর্মকে বাদ দেওয়ার যে প্রকল্প তাকে মোকাবিলা না করলে এই সংকট সহসাই কাটবে না। এখন গত এক বছর যাবৎ মাজার, দরবারে যে হামলা হয়েছে তার যদি পাল্টা আঘাত হয় তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে। ফলে, এই সহিংসতাকে যে কোনো মূল্যেই হোক বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে; সামাজিক সংলাপের মাধ্যমেই এই সংকট দূরীভূত করা সম্ভব
তিনি আরও বলেন, মাজারসহ যত মতাদর্শের মানুষের বসবাস বাংলাদেশে রয়েছে, সব ধরনের মানুষের মধ্যে যদি সংলাপের সুযোগ না থাকে তাহলে তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক ফ্যাসিবাদ এখনো রয়ে গেছে। আমাদের এখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করতে হবে।
উপদেষ্টা যোগ করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, সুফি সমাজের পক্ষ থেকে এই আওয়াজ তোলা উচিত যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের ইশতেহারে যেন সুফি সমাজের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ অলি আউলিয়ার দেশ। এখানে সব ধর্মের, সব মতের মানুষের পাশাপাশি বসবাস। আমরা ছোটকাল থেকেই দেখে এসেছি হজরত শাহজালাল, শাহ পরান ও অন্যান্য আউলিয়াদের মাজারে, দরবারে মানুষ জেয়ারত করতে যান। এই সংস্কৃতি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সব ধর্মের, সব মতের মানুষ সহিংসতাকে মোকাবিলা করে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবেন।
এই সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “মাজারে সহিংসতার বিষয়ে কথা বলা একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে, আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতেও আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আমাদের দেশে মাজার, দরবারের দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের একটা ঘাটতি হলো তারা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না। সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মাজার, দরবারে যে সহিংসতা হলো এ ঘটনাগুলোর তদন্ত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই কমিশন গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা করবে। সর্বশেষ কথা হলো, এদেশের নাগরিক কওমি হোক, আলিয়া হোক, সুন্নি হোক, যে যেই মতাদর্শ ধারণ করুক না কেন কেউ কারো গায়ে আঘাত করবো না। এই জায়গায় আমাদের একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।
হামলার শিকার হওয়া শেরপুরের মুর্শিদপুর দরবারের প্রতিনিধি মাওলানা মতিউর রহমান এ সময় বলেন, যে নাজেহাল পরিস্থিতির মধ্যে মুর্শিদপুর দরবারকে পড়তে হয়েছে তা বর্ণনাতীত। এই দরবারে মাজার নেই, সেজদা নেই, কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নেই। তবুও কেন এই বর্বরোচিত হামলা হলো? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।
মাজারে আক্রমণ মানে সমাজকে বিভক্ত করা- এমনটি উল্লেখ করে গাজীপুর দরবারের প্রতিনিধি মুহা. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যদি চুপ থাকি তাহলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এখনি সময় সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার। মাজার কেবল ধর্মীয় বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সরকারকেই এর সুরক্ষার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে।
পীরজাদা মাহমুদুল হুদা খান বলেন, আমরা যারা হামলার শিকার হচ্ছি তারাই কেবল হামলার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছি। যারা মাজারে শায়িত আছেন তাদের জীবনে মানুষের প্রতি সহানুভূতি ছিল, গরীবের প্রতি দরদ ছিল। কিন্তু হাতে লাঠি ছিল না। কিন্তু তাদের প্রতিই অমানবিক আচরণ প্রদর্শন করা হচ্ছে।
নলতা দরবারের প্রতিনিধি, আহছানিয়া ইন্সটিটিউট অব সুফিজমের অধ্যাপক শাঈখ মুহাম্মদ উছমান গনী বলেন, মাজার বা দরবারের কারও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন ওরসে রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সরাসরি দরবার থেকে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা উচিত নয় এবং ধর্মীয়ভাবে আমাদের ঐক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর ভিত্তিতে। তাহলে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ কমে আসবে।
মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের প্রতিনিধি জনাব আসলাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ১২ হাজার মাজার ও দরবার রয়েছে। আমরা কি পারতাম না এই সহিংসতাকে মোকাবিলা করতে? কিন্তু আমাদের পীর, মুর্শিদরা আমাদের এই শিক্ষা দেননি। আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে সহিংসতার মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
সংলাপে ওমর ফারুক ফেরদৌস বলেন, মাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় যেমন বেদাত ও শিরকের কার্যকলাপ রয়েছে সেগুলোকে মাজার কর্তৃপক্ষের নিজেদেরই প্রতিরোধ করতে হবে। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে রয়েছে তার পেছনে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার একটি ভূমিকা রয়েছে। যখনই আমাদের দেশে প্রতিবেশী দেশের অনুকূলে নয় এমন সরকার ক্ষমতায় আসে তাদের সময়েই এই বিষয়গুলো বাড়ে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হামলার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
কবি ও লেখক সৈয়দুল হক বলেন, বাংলাদেশে সুফি সমাজের মতো এত বড় ঘরানা মুসলমানদের মাঝে আর নেই। কিন্তু কেন এই সমাজ সহিংসতা মোকাবিলা করতে পারলো না? রাষ্ট্রকে কেন আমরা বাধ্য করতে পারলাম না এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে? আমার মনে হয় এই প্রশ্নের মাঝেই আমাদের মূল সংকট লুকিয়ে আছে।
লেখক ও গবেষক তাহমিদাল জামি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কার আকিদা, মতাদর্শ কেমন তার দিকে তাকানো রাষ্ট্রের কাজ নয়। মাজার, দরবারে যদি সংস্কার প্রয়োজন হয় তাহলে তা মাজার, দরবার কর্তৃপক্ষ ভেতর থেকেই করবে। বাহির থেকে সহিংসতা করে সংস্কার করা যাবে না বা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ইফতেখার জামিল বলেছেন, মাজারে সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। এটিকে নিছক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা মোকাবিলা করা যাবে না। এটি নিয়ে সামাজিকভাবে কাজ করতে হবে।
কবি ও লেখক রাফসান গালিব বলেন, কেন ৫ আগস্টের পর এত বেশি মাজারে হামলা হলো? এটা সুস্পষ্ট রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। এর সঙ্গে অবশ্যই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ও যুক্ত। কিন্তু রাষ্ট্র কেন মাজার, দরবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে পারলো না এই প্রশ্ন করতে হবে।
অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী বলেন, বাংলাদেশে মাজার সংস্কৃতির ওপর যে হামলা হয়েছে তা বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসকেও আঘাত করেছে। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ব্যতীত এই সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত দুরূহ।
আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন বলেন, কোরআন এত সুন্দর, নির্মল, পবিত্র অথচ কোরআনের নাম ধারণ করে অনেকে মাজার, দরবারে হামলা চালাচ্ছেন। এটা একজন মুসলমান হিসেবে সহ্য করা খুবই কষ্টকর। এই সহিংসতার ফলে দেশের সমাজ ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই বিপর্যয় রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে, যা কারও জন্যই কল্যাণকর নয়।
গবেষক ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, সুফি সমাজ নিজেদের মেইনস্ট্রিমে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি। মেইনস্ট্রিম ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতিতে তাদের যথেষ্ট হিস্যা থাকলেও এই হিস্যা তারা বুঝে নিতে পারেনি। কেন এই অক্ষমতা তা মাজার, দরবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরই অনুধাবন করতে হবে। পাশাপাশি কোনো যুক্তিতেই সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।