দুপুর ১:৫৭, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমি তো সিংহ, ইঁদুরের গর্তে আমার পাও ঢুকবে না : আল্লামা শফির শিষ্য

ব্লগার ও চরম ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে স্বীকৃত আসিফ মহিউদ্দিন দুদিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। যেটা আল্লামা শাহ আহমদ শফির শিষ্য হারুন ইজহারের চার বছর আগের বক্তব্য সম্পৃক্ত। সেটার জবাবও দিয়েছেন হারুন ইজহার।

হারুন ইজহারের ফেসবুক থেকে : হারুন ইজহার লিখেছেন, একজন নবী-বিদ্বেষী, স্বঘোষিত রিদ্দাহ গ্রহণকারী ও বিদেশে উদ্বাস্তু – আসিফ মহিউদ্দিন কয়েকদিন আগে এক পোস্টে লিখেছেন ;

“বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম, হাটহাজারির পক্ষ থেকে আল্লামা আহমদ শফীর সুযোগ্য শিষ্য মুফতি হারুন ইজহার আমার সাথে বিতর্ক কিংবা আলোচনা করতে আগ্রহী। নাস্তিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে আগ্রহী। স্ট্যাটাস লিঙ্কগুলো নিচে দিচ্ছি”।

আসল ঘটনা : ২০১৭ সালে হযরত আল্লামা আহমদ শফী (রাহ.)কে বিতর্কের ফাঁকা আহ্বান জানিয়েছিল নবী-বিদ্বেষী শাহবাগী নিম্নমধ্যবিত্তের এ লোকটি। হাটহাজারী কলেজ ময়দানের এক সমাবেশ থেকে আমি তার এহেন আস্ফালনের উত্তরে বলেছিলাম, আসিফের সাথে মোকাবেলার জন্য আল্লামা আহমদ শফি কেন, তাঁর শিষ্য হিসেবে আমরাই যথেষ্ট। আমি বলেছিলাম এ বিতর্ক প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হবে এবং উক্ত মুরতাদকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হবে, প্রয়োজনে প্রশাসনের উদ্যোগে সেটা হতে পারে।

২০১৭ সালে (ফেব্রুয়ারি) প্রদত্ত আমাদের প্রতিক্রিয়ার উত্তরে ২০২০ সালে এসে এ নবী-বিদ্বেষী একটা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন আমাদের প্রতি। কি চমৎকার বীরত্ব!

ইন্ট্রাস্টিং বিষয় হলো, এ চার বছরে আধুনিক প্রজন্মের অনেক তরুণের সাথে বহু ডিবেইট হয়েছে আসিফদের সাথে, যেখানে যুক্তিতর্কে পরাজিত হয়েছে তিনি। পরাজিত লোকের সাইকোলজি হলো একটা পর্যায়ে তাদের কোন অনুভূতি বা লাজলজ্জা থাকে না। তারা হম্বিতম্বি করেই চলে। তারা কখনো পরাজয় মেনে নেয় না।

আসিফদের স্বরূপ; তারা আদর্শিক নাস্তিক নয়, হীনমনা ইসলামবিদ্বেষী। বাস্তব কথা হলো আদর্শিক নাস্তিকের সাথে ডিবেইটে যুক্তিতর্কের স্বাদ আছে, কিন্তু বাংলাদেশে যা আছে, তা হলো ইসলামবিদ্বেষী ইতরামি। এরা আবার যৌনবাদীও। আমরা দেশে-বিদেশে অনেক একাডেমিক ব্যক্তিবর্গকে জানি যারা নাস্তিকতা লালন করেন, এবং একাডেমিক জায়গায় তাদের আলাপকে সীমাবদ্ধ রাখেন, তাদের কোন আন্তর্জাতিক কানেকশন নেই, তাদের ভাষায় নাস্তিকতার দর্শন আছে, বিদ্বেষের শব্দ নেই। বাংলাদেশের শাহবাগীয় ব্লগাররা সে মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নন। তারা যৌন কুরুচিপূর্ণ চিত্রকে মুক্তমনার নামে হাজির করে থাকেন। নাদিয়া ইসলামরাই তাদের সাথে ডিবেইটে পার্ফেক্ট।

আসিফ! আপনারা আমাকে কতটুকু জানেন?
আপনার কাছে আমার একটা পরিচয় জানিয়ে দেয়া দরকার, আমি স্টিফেন হকিংয়ের সিনিয়র সহপাঠী মরহুম বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের সাথে পারবিরিকভাবে সম্পৃক্ত। ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু তিনি ক্যামব্রিজের অধ্যাপক ছিলেন।

আপনাদের ইসলামবিদ্বেষী মুক্তমনা পেইজের টাইমলাইনে একবার তাঁর ছবি দেখে স্যারকে তা অবহিত করলে তিনি চরম বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

স্যারের কিছু বই ও লেকচার আছে যেখানে তিনি রিলিজিয়ন, সাইন্স ও ফিলোসোফি নিয়ে প্রচুর তাত্ত্বিক ও কম্পারেটিভ আলাপ করেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আঙ্কেল! আপনি ইনতিকাল করলে এমন সব বিষয়ে আমি কার সাথে আলাপ করতে পারি, এবং যিনি অবশ্য বিজ্ঞানী হবেন, তিনি উত্তরে যার নাম আমাকে সাজেস্ট করেছিলেন তার মধ্যে এমন কারো নাম নেই যাদেরকে আপনারা বাংলাদেশে গুরু মানেন।

আপনাদেরকে আমি আমার আরেকটা পরিচয় দেই, তিনি দার্শনিক ড. মুঈনউদ্দিন আহমদ খান, আমার পূর্বপুরুষ খান সিদ্দিকী পরিবারের সাথে যার বংশ সম্পৃক্ত। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা এ মহাব্যক্তিত্বের লেখা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত।

প্রায় শতবর্ষের এ মহাবুদ্ধিজীবী এখনও বেঁচে আছেন। বাংলাদেশে তার সমকক্ষ কোন দার্শনিক থাকলে আপনি তাদের নাম বলতে পারেন।

আমি আপনাদের মত নবী-বিদ্বেষী ব্লগারদের কাছে আমার কাজের ও সম্পর্কের এ ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধারার উদ্দেশ্য হলো ; আমাদের সাথে বিজ্ঞান ও দর্শনের ঠিকানাগুলোর সাথে কতটা নিবিড় যোগাযোগ তা জানান দেয়ার পাশাপাশি এ কথা স্পষ্ট করা যে, বিজ্ঞান ও দর্শনের বাস্তব চর্চা আর এসব নাম ব্যবহার করে সরল লোকদের সামনে ভাব ধরা, আর ভান করা নিকৃষ্ট হিপোক্রেসি!

সর্বশেষ কথা :আমি আপনাদের ব্যাপারে এখনও হতাশ না, আপনাকে আমি কুতর্কের শোডাউন বাদ দিয়ে বাস্তব খোলামেলা আড্ডার আহ্বান জানাই।

আপনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নব্বই সেলে হাজতি বন্দি ছিলেন, সেখানে বন্দিদের কাছে আপনি স্বীকার করেছিলেন নবীজি (সা.)’র ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের কথা, তবে নবীজির দৈবসত্ত্বার উপর আপনাদের অস্বীকৃতি!

কিন্তু আপনার কারামুক্তির পর আপনি সে অবস্থান থেকে সরে আবার অশ্লীল নবী-বিদ্বেষে নেমে পড়েছেন। আপনাকে চাপাতি, কতল, কুড়ালের জুজুর ভয় বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ মানসিকতায় ইসলামকে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানাই।

আপনি লিখেছেন; “আমি রাজি আছি। চ্যালেঞ্জ দিয়ে উনি এবার কোন ইঁদুরের গর্তে লুকান সেটিই দেখার অপেক্ষা। আমি গ্যারান্টি দিতে পারি, এবারে উনাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না”

আপনি চরম নবী-বিদ্বেষী হওয়া সত্ত্বেও ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বলতে চাই, আমি তো সিংহ, ইঁদুরের গর্তে তো আমার পায়ের আঙ্গুলও ঢুকবে না।

আমি আপনাদের ভাষা ও মানসিকতার পরিবর্তন চাই, অতঃপর আপনাদের সাথে ডিবেইট চাই, যে ডিবেইট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুতর্কের নয়, হবে বোঝাপড়ার বয়ানে সমৃদ্ধ, যদিও এমন বয়ানের অতীত নজীর রয়েছে যা আপনাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারেনি, তবু আমি আশাবাদী থাকতে চাই।