সৌদি আরবে নির্যাতনে মৃত্যু বাংলাদেশি নারীর, পরিবার জানল ২৪ দিন পর

সৌদি আরবে নির্যাতনে মৃত্যু বাংলাদেশি নারীর, পরিবার জানল ২৪ দিন পর

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : অভাব অনটনের সংসার। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মরুর দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমান সাজনা বেগম। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী তিনি।

সাজনার পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্সের মাধ্যমে সৌদি আরবে যান সাজনা। তাঁকে গ্রহণ করে সৌদিস্থ রিক্রুটমেন্ট অফিস সাহেল আল বাতেন। গত ২ আগস্ট সৌদি আরবে সাজনা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর ২৪ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার সে খবর পরিবার জানতে পারে। সৌদি আরবে অবস্থানরত অন্যদের মাধ্যমে তাঁরা খবরটি জানেন। স্থানীয় দালাল বা রিক্রুটির এজেন্সির কেউই তাঁদের এতোদিন কিছুই জানায়নি।

যোগাযোগ করা হলে, রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন সাজনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন।

সাজনার স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, নিকটাত্মীয় গোলাপ মিয়ার কথায় সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর আশায় সৌদিতে যান সাজনা। রাজধানীর কনকর্ড অ্যাপেক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরব যাওয়ার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেন সাজনা। সেখানে এক সৌদি নাগরিকের গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। প্রথম তিন মাস সেখানে ভালোই চলছিল তাঁর। এরপরই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে পরিবারের লোকজনকে জানান সাজনা। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার ফোন করে আকুতি জানান। একপর্যায়ে তাঁকে মেরে ফেলার আশঙ্কার কথাও জানান সাজনা।

সাজনার স্বামী মিজানুর রহমান ও স্বজনেরা তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় দালাল গোলাপের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউপি সদস্য আব্দুল বাছিতের উপস্থিতিতে সালিস হয়। সাজনাকে ফিরিয়ে আনতে দুই লাখ টাকার চুক্তি হয়। সর্বস্ব বিক্রি করে দালালের চাহিদা পূরণ করেন সাজনার স্বজনেরা।

গত ১১ জুলাই স্থানীয় মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে নগদ দুই লাখ টাকা নেন স্থানীয় দালাল গোলাপের শ্যালক দিলকাছ। সাজনার ভগ্নিপতি আলী আহমদ গোলাপের কথা মতো টাকা বুঝিয়ে দেন। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সাজনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন গোলাপ মিয়া। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও ঘুরাতে থাকেন। নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে গত ২ আগস্ট সৌদি আরবে সাজনা বেগমের মৃত্যু হয়। কিন্তু গোলাপ মিয়া সে খবর গোপন রাখেন। সৌদিতে পরিচিতদের মাধ্যমে আজ এ সংবাদ পায় সাজনার পরিবার।

সাজনার স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, গরু বিক্রি করে স্ত্রীকে দেশে ফেরানোর জন্য টাকা দেই। কিন্তু গোলাপ মিয়া নানা কথায় সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। আমার স্ত্রী সাজনা সৌদিতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে আমরা জেনেছি। কিন্তু বিষয়টি আমাদের কাছে গোপন করেন গোলাপ। স্ত্রীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য শতচেষ্টা করেও পারলাম না-এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিজানুর রহমান।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন সাজনার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যত দূর জানতে পেরেছি, রাতে ঘুমানোর পর সাজনাকে সকালে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সৌদি পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। সাজনার লাশ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। এ কারণে দেশে আনতে দেরি হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর দেশে এলে বিস্তারিত বলা যাবে, কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সাজনার লাশ দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছেন তাঁরা। এজেন্সি থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

তবে সাজনাকে নির্যাতনের অভিযোগ এবং দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দালালের দুই লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন।

স্থানীয় দালাল গোলাপ মিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সাজনার কথা বলতেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এখন পর্যন্ত ফোন বন্ধ রেখেছেন।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা