মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে যোগদানের আগে হাবিবুর রহমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এভিপি থাকাকালে তারই কারসাজিতে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছিল।

এমডির এসব দুর্নীতির কারণে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখা এবং ব্যাংকটির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে তিন মাসের ছুটি দেয়া হয় এমডিকে। একই সঙ্গে তাকে অপসারণ কিংবা কিভাবে এই সংকট থেকে ব্যাংকটিকে রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমডিকে নিয়োগ দেয়ার আগে তার দুর্নীতির বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। সরকারি সংস্থা দুদকের চার্জশীট ভূক্ত আসামি তিনি। তার এসব অপকর্মের কারণে ব্যাংকটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এমডির অপসারণ কিংবা তার বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে গাইডলাইন আমাদের দেবে, আমরা তা অনুসরণ করব। তবে গ্রাহকের আস্থা হারানোর কিছু নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে তার এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চাকরিকালে প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা দুদকের মামলায় গত রোববার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি মো. হাবিবুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত রোববার এই পরোয়ানা জারি করেছেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি তিনি ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিট থেকে জানা যায়, এই মামলার অন্যতম আসামী হাবিবুর রহমান ২০০০-২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় ব্যাংকের গ্রাহক প্যাট্রিক ফ্যাশনস লি. এর নামে ঋণ প্রস্তাবের সুপারিশ করেন এবং পরবর্তীতে পুনঃতফসিলের সুপারিশ করেন। তিনি উক্ত ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের তৎকালীন ইনচার্জ হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্যাট্রিক ফ্যাশনসের সিআইবি রিপোর্ট সম্পর্কিত অসত্য তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করান। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি না পাওয়ায় উক্ত ঋণ প্রস্তাবের মঞ্জুরিপত্র ইস্যু করেনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক। মঞ্জুরিপত্র ছাড়াই কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ দেন হাবিবুর রহমান। পরে তিনি ওই ঋণ পুনঃতফসিলের জন্যও সুপারিশ করেন। ঋণের সুদ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ওই ঋণ আত্মসাতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১১ কোটি টাকা হারিয়েছে ব্যাংকটি। ঘটনার সময় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের (এভিপি) দায়িত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারি পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে হাবিবুর রহমানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মতিঝিল থানার দন্ডবিধি ৪০৬/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং জিআর ৯৭/২০১৮। যাহা বর্তমানে মেট্রো স্পেশাল মামলা নং ২৭২/২২ হিসেবে চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, এমডির আর্থিক কেলেঙ্কারি, ঋণ জালিয়াতি, প্রতারণা এবং সর্বশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ইমেজ (ভাবমূর্তি) সঙ্কটে পড়েছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সুনামের সঙ্গে আর্থিক কার্যক্রম চালিয়ে আসা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। তবে এমডির ঘটনায় ব্যাংকটির প্রাণশক্তি আমানতকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় বা আমানত সুরক্ষিত রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকটির এমডি মো. হাবিবুর রহমান সম্প্রতি জানান, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আইনগতভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ফের যোগদান করবেন কি না সেই বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিংখাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত, পেশাগতভাবে দক্ষ, অভিজ্ঞ ব্যক্তিই এমডি হতে পারবেন। তবে ফৌজদারি আদালতে দন্ডিত কিংবা জাল জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যান্য অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন না। এছাড়া অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল জালিয়াতি ও নৈতিক স্থলনের মতো ঘটনায় জড়িত থাকলে তিনি এ পদের যোগ্য হবেন না।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ