বিকাল ৩:০১, ১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

আলোচনা সভায় বক্তারা : একজন মেধাবী, সৎ ও গণতন্ত্রমনা সাংবাদিক ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ একজন গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, পরিবেশ সচেতন ও সাংস্কৃতিক মানুষ ছিলেন। তার ইতিহাস চর্চা ছিলো নির্মোহ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও সৎ সাংবাদিক। বর্তমানে যেখানে অনেক সাংবাদিক ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য দালালি করেন সেখানে তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে গেছেন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে রাজনৈতিক পরিবর্তন যেদিকে যাচ্ছে, সেখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের ইতিহাসের ভিত্তিটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত সময়ে আমার সঙ্গে তার যে সম্পর্কটা ছিল, সেটা ছিল রাজনৈতিক, আন্দোলনভিত্তিক। একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ যখন আন্দোলনকে সমর্থন জানান তখন মনে হয় বিরাট পাওয়া। সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কেউ যখন এগিয়ে আসছে না, তখন মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের মতো লোক চলে আসে। এটা কিন্তু আন্দোলনের জন্য বিরাট পাওয়া।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ের আন্দোলন পূঞ্জিভূত হতে হতে ফ্যাসিবাদের যে পতন হলো, এখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের পায়ের ছাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই আগস্টের আন্দোলনের পরে আমরা অনেককেই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এই আন্দোলনের যে ফাউন্ডেশন, জনমত সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে স্বৈরাচারবিরোধী যে ক্ষোভ পূঞ্জিভূত হয়েছে, সেখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের চিরায়ত অবদান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লড়াইয়ের জন্য যদি কাউকে পদক দিতে হয় তাহলে মাহফুজ উল্লাহকে দিতে হবে। কারণ যখন কেউ যেত না টেলিভিশনে, তখন তিনি একা ইনিংস খেলেছেন। শেষ টকশো যেদিন করেছেন, সেদিন মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। তারপর ব্যাংককে ডাক্তার দেখিয়ে দেশে আসার ৭/১০ দিন পরই চলে গেছেন।

আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মাহফুজ উল্লাহ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। আমি শুনেছি, অনেকে অনেক সময় তাকে দাওয়াত দিতে ভয় পেতেন। উনি আসবেন, একা কথা বলবেন, বিতর্কে ওনার সঙ্গে পারা খুব মুশকিল ছিল। ওনার ৪/৫ দশকের ইতিহাস মুখস্ত ছিল। নবীন কোনো দালাল সাংবাদিক যখন ওনার সঙ্গে বিতর্কে আসতেন তখন দেখা যেত অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। তিনি অনন্য ছিলেন।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে মেরুদণ্ডওয়ালা সাংবাদিক পাওয়া খুব মুশকিল। ইতিহাসে সাংবাদিকদের ক্ষমতার সঙ্গে কলিউশনটা খুব বাজে। বছরের পর বছর সাংবাদিকরা লিডার হওয়ার জন্য, একটা প্লট পাবার জন্য বসে থাকেন। সেই জায়গায় মাহফুজ উল্লাহ ভাই ব্যতিক্রম ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তিনি নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।

অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আমরা সবসময় পরিবেশ এবং বনকে এক কোণায় রেখে দেই। এটা কিন্তু চলবে না। আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখতে চাই। কিন্তু সেই পরিবর্তনে যদি আমরা বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার আলোচনা না দেখতে পাই, তাহলে পরিবর্তন কিন্তু একেবারেই নিরর্থক। আমার কাছে মনে হয় মাহফুজ উল্লাহ বাসযোগ্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন। আমরা যদি সেদিকে না যেতে পারি তাহলে নিজেদের ক্ষমা করতে পারব না।

প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে সাবাব রায়হান কবীরের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, নজমুল হক নান্নু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ওয়াশিংটনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোর্জা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ডা. বজলুল গণি ভুঁইয়া এবং প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ছেলে মোস্তফা হাবিব বক্তব্য রাখেন।