বিকাল ৪:৩০, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় অংশ জুড়ে আবাহনী-মোহামেডান। বিশেষ করে ফুটবলে এই দুই দলের দ্বৈরথ জন্ম দিয়েছে অনেক ইতিহাসের। বাংলাদেশের অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও রেকর্ড সংরক্ষিত নেই। দুই দলের মুখোমুখি ম্যাচের ফলাফলের বিস্তারিত রেকর্ড নেই বাফুফে এবং আবাহনী-মোহামেডান কারও কাছে। সেই ইতিহাস সংরক্ষণের কাজটি করেছেন মোহামেডানের অন্তঃপ্রাণ সমর্থক ও ক্রীড়া লেখক টি ইসলাম তারিক।
মোহামেডানের জন্ম ১৯৩৩ আর আবাহনীর ১৯৭২ সালে। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ হলেও দুই দলের প্রথম মুখোমুখি দেখা ১৯৭৩ সালে। সেই ১৯৭৩-২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে আবাহনী-মোহামেডানের লিগ ও টুর্নামেন্টে প্রীতি ম্যাচের সকল ফলাফল নিয়ে তারিকের সংকলিত গ্রন্থ– ‘মোহামেডান-আবাহনী ময়দানি লড়াই’। গণমাধ্যম ও প্রচলিত অর্থে আবাহনী-মোহামেডান লেখা হলেও মোহামেডানের সমর্থক, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা ‘মোহামেডান-আবাহনী’ বলে অভ্যস্ত।
টি ইসলাম তারিক পেশায় একজন সরকারি চাকরিজীবী। তার ধ্যান-জ্ঞান মোহামেডান। বিশেষ করে মোহামেডানের ফুটবল ম্যাচ গ্যালারি থেকে উপভোগ করার চেষ্টা থাকে আপ্রাণ। ফুটবলের ঐতিহাসিক বই প্রকাশ করতে পেরে বেশ আপ্লুত তিনি, ‘মোহামেডান-আবাহনীতে যারা খেলেছেন অনেকের নাম ক্লাবে সংরক্ষিত নেই। এই বইয়ে প্রতি ম্যাচের ফলাফলের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের তালিকা এবং রেফারির নামও রয়েছে। যা তাদের একটি স্বীকৃতিও। এটা আমার তৃপ্তির একটা জায়গা।’
বই প্রকাশ সময় ও কষ্টসাধ্য বিষয়। এরপর ক্রীড়াঙ্গনের ঐতিহাসিক বই তো আরও দুরূহ। বই সম্পাদনের কাঠখড় পোড়ানো সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি এ নিয়ে কাজ করছি। ১৯৮০-৯৫ পর্যন্ত মোহামেডান আবাহনীকে হারানো ম্যাচের পত্রিকার কাটিং আমার কাছে ছিল। যখন চিন্তা করলাম বই বের করব, তখন আবাহনীর জয়ের ম্যাচেরগুলোও সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশ আর্কাইভে গিয়ে পত্রিকা-ম্যাগাজিন ঘেটে প্রতিটি খেলার ফলাফল সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেছি।’
লেখকের তথ্য মতে— ১৯৭৩-২০২৩ এই ৫০ বছরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ফুটবলে ১৩৬ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে মোহামেডান ৪৭ বার (টাইব্রেকারে ১০) এবং আবাহনী ৪৯ বার (টাইব্রেকারে ৪) জিতেছে। অমীমাংসিত ছিল ৩৪ বার, পরিত্যক্ত ৫ এবং ওয়াকওভার হয়েছে একটি ম্যাচে। জয়-পরাজয়ের পাশাপাশি দুই দলের হেড টু হেডে গোল সংখ্যা, গোলদাতা, অধিনায়ক ও কোচের নামও রয়েছে এই গ্রন্থে।
আজ (শুক্রবার) দুপুরে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে ‘মোহামেডান-আবাহনী ময়দানি লড়াই’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বর্ষীয়ান ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মোড়ক উন্মোচন করেন। এই সময় মোহামেডানের কিংবদন্তি প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, ছাইদ হাসান কানন, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের পাশাপাশি আবাহনীর কিংবদন্তি আব্দুস সাদেক, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ও কাজী আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সাবেক ফুটবলাররা তারিকের গ্রন্থকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
মোহামেডান সমর্থকের গ্রন্থ হলেও, উৎসর্গের তালিকায় রয়েছেন আবাহনীর প্রয়াত কিংবদন্তি মোনেম মুন্না ও মোহামেডানের প্রয়াত বাদল রায়। সাধারণত লেখকের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে গ্রন্থ উৎসর্গের রীতি থাকলেও ‘মোহামেডান-আবাহনী ময়দানি লড়াই’ ব্যতিক্রম। লেখক তারিক জানান, ‘ক্রীড়াঙ্গনের বই, এজন্য দুই ক্লাবের দুই প্রয়াত কিংবদন্তিকে উৎসর্গ করেছি। বাদল দা মোহামেডান ছাড়া অন্য কোনো ক্লাবে খেলেননি। আমরণ মোহামেডানের সঙ্গে ছিলেন। অন্যদিকে, মোনেম মুন্না আবাহনী তো বটেই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা ফুটবলারদের একজন। তাই এই দুই জন প্রয়াতকে উৎসর্গ করা হয়েছে।’
‘মোহামেডান-আবাহনী ময়দানি লড়াই’ গ্রন্থের দাম ১৫০০ টাকা। ২৫ শতাংশ ছাড়ে ১১২৫ টাকায় বইটি সংগ্রহ করা যাবে অন্বেষা প্রকাশনী এবং রকমারি ডটকম থেকে। তথ্যসমৃদ্ধ বইটি প্রকাশ করেছে অন্বেষা।