সকাল ৬:৫৩, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ধর্ম ডেস্ক
সিরিয়া একটি ঐতিহাসিক ভূমি। ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই এর সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। মুসলিম শাসনামল ছাড়াও সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক নগরী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভত্যার কেন্দ্র ছিল। যুদ্ধ, বিজয়, বিজয়ীদের উল্লাস, পতিত শক্তির কান্না— ইতিহাসের এমন অংসখ্য বাস্তবতার সাক্ষী এই ভূমি। ইতিহাস থেকে নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছে। নতুন থেকে আরও বেশি আগ্রহের কেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সিরিয়া। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম উত্তেজনা ও ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ পার করছে এই ভূমি। এখান থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। তবে নতুন করে দেখা দিয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসনের শঙ্কা।
এই ভূমির উত্তেজনা, শঙ্কা, পুরো বিশ্বের জন্য বিশেষত কোরআন-হাদিসের অনুসারী মুসলমানদের জন্য উদ্বেগ ও আগ্রহের। কারণ, কোরআনে এই ভূমি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বৃহত্তর শাম ভূমির কল্যাণ, অকল্যাণের সঙ্গে মুসলমানদের ভালো-মন্দ সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত মুয়াবিয়া ইবনে কুররা রা. সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘যখন শামভূমি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের মাধ্যমে ধ্বংস হবে তখন তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ থাকবে না। আর আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। তাদের যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯২)
কেয়ামতের সব থেকে বড় আলামত দাজ্জালের ধ্বংস, হজরত ঈসা আ. ও ইমাম মাহাদি আগমনের সুসংবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ভূমি। স্বভাবতই হাদিসের বাণীতে বিশ্বাসী মুসলমানদের এই ভূমির প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। এবং তারা এই ভূমির ভালো-মন্দ, উত্তেজনা রোমাঞ্চের প্রতি বেশ মনোযোগী।
এর বাইরেও ইসলামি খেলাফতে স্বর্ণযুগের দীর্ঘ একটি সময় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, আলেপ্পো, হিমস নগরী মুসলিম শিল্প, সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশের কেন্দ্র ছিল। ৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৮৯ বছর উমাইয়া শাসনের রাজধানী ছিল সিরিয়ার বর্তমান রাজধানী দামেস্ক। এরপর আব্বাসী, ফাতেমী, মামুলক, সেলজুক, উসামনীয় যুগে সিরিয়া বা এর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো খেলাফতের কেন্দ্র না থাকলেও খেলাফত শাসনের অধীনে ছিল।
সিরিয়ার দামেস্কের প্রতি মুসলমানদের আগ্রহের আরেকটি কারণ, এই শহরটি ক্রসেডারদের কবল থেকে জয় করেছিলেন আল আকসা বিজয়ী বীর সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন মুসলিম অনুপ্রেরণার বীর সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগলিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বাদ দিলেও ইতিহাসের ঘোর লাগা ভূমির প্রতি ভালোবাসা ও রাসূল সা.-এর মুখে উচ্চারিত ভূমি হিসেবে সবসময় মুসলমানদের কাছে ভিন্ন মাত্রা ও আগ্রহের কেন্দ্র সিরিয়া ও বৃহত্তর শাম ভূমি।
এই ভূমির প্রতি মুসলমানদের প্রত্যক্ষ ইতিহাসের সূচনা রাসূল সা.-এর যুগ থেকেই। রাসূল সা. এবং ইসলামের প্রথম দুই খলিফা হজরত আবু বকর, ওমর রা.-এর সময়কাল থেকেই বৃহত্তর শাম অঞ্চলে মুসলমানরা যুদ্ধ, অভিযান পরিচালনা করেন। সর্বশেষ সিরিয়া মুসলমানদের হাতে বিজিত হয়েছে ওমর রা.-এর যুগে। এর আগে মুতা, তাবুক, ইয়ারমুকসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে শাম অঞ্চলে।
ইসলামের ইতিহাস, বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক সংকটের বাইরেও সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্দানের প্রতি মুসলমানের অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে নবীদের ভূমি হিসেবে। তুফানে নূহের পর নূহ আ. সিরিয়াতে অবতরণ করেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। নূহ আ. ছাড়াও হজরত মুসা., ইববরাহিম, সুলাইমান ও ঈসা আ.-এর বসবাসের ভূমি ছিল সিরিয়া। মুসলমানরা সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর অনুসারী হলেও তারা পূববর্তী সব নবীকে সম্মান-শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তাদের প্রতীক ও ভূমির প্রতি অন্তরে ভালোবাসা লালন করেন। সব মিলিয়ে, ইতিহাস, ঐহিত্য, সোনালী অতীতের শৌর্য-বীর্য ও বর্তমানের কালিমা মুছে দেওয়া ভবিষ্যতের সুসংবাদ বহন করছে সিরিয়া।