দুপুর ১২:৩৯, ৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর কারফিউ উপেক্ষা করে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান এবং নির্বাচিত বেসামরিক নেতাদের আটককে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের ফলে হাসপাতাল , শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সোমবার দেশটিতে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিক্ষোভ হয়। এই ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনা সরকার কয়েকটি শহরে জমায়েত নিষিদ্ধ করে কারফিউ জারি করে। কিন্তু মঙ্গলবার কারফিউ উপেক্ষা করে দেশের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রস্থল সুলে প্যাগোডার নিকট বিক্ষোভ করে জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে হাজারো মানুষ যোগ দেন।
মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর রাজধানী নেপিদো এবং বাগোতে জলকামান ছোড়ে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডলে পুলিশ এক সাংবাদিকসহ সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী ২৭ বিক্ষোভকারীকে আটক করে।
ডেমোক্রাটিক ভয়েস অব বার্মার একজন সাংবাদিক বলেন, র্যালির ভিডিও ধারণ করায় তাকে আটক করা হয়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া মানুষদেরকে লাঠিপেটা করা হয় বলেও জানান তিনি। দুটি গণমাধ্যম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইয়াঙ্গুনে সামরিক আইন জারির ফলে সৈনা সদস্যদের আগমনের গুজবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। তা সত্ত্বেও ভয় উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। পায়ি ফায়ো (৩৩ বছরের ব্যক্তি, তার বন্ধুদের সঙ্গে মিয়ানমারে সিমেন ইউনিয়ন থেকে সুলে প্যাগোডার নিকট বিক্ষোভে যোগ দিতে আসেন) বলেন, ‘গতকাল রাতের মার্শাল ল’ এর কারণে আমি ভেবেছিলাম মানুষ বিক্ষোভ করবে না। কিন্তু তারা এসেছে। বিক্ষোভকারীদের দেখে তিনি গর্বিত মন্তব্য করে বলেন, যতদিন আমাদের নেতা অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্টসহ অন্যান্য নেতারা মুক্ত না হচ্ছে; ততদিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো।’
এর আগে উইন (৩৭) নামে রাস্তার এক খাবার বিক্রেতা জানান, রাজধানী নেপিদো থেকে সেনা বাহিনী আসার খবর শোনা সত্ত্বেও প্রতিবাদ চলমান রয়েছে।
র্যালিতে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করে। তাতে লেখা ছিল, ‘স্বৈরতন্ত্র চাই না, আমরা আমাদের নেতাদের চাই’। এদিকে, স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা গঠিত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীর সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিম অ্যাম্বুলেন্সসহ সুলে প্যাগোডার কাছে অবস্থান করছিল। মায়াত মো লুইন নামে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এবং তার সহকর্মী কাউং পায় সোন থিন জলকামানে আহতদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেসের পাশে অপেক্ষা করছিলেন।
মায়াত লুইন বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অসংখ্য মানুষ সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। যদি তারা আহত হয় তাহলে আমরা সেবা করব। এটা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব।’
ইয়াঙ্গুনের সান চুয়াং শহরে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রায় শতাধিক শিক্ষক প্রধান সড়কে অভ্যুত্থান বিরোধী সাইন তিন আঙ্গুল প্রদর্শন করে বিক্ষোভ করেন। থিয়েন উইন সো নামে একজন শিক্ষক এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তাদের হুমকিতে ভীত নই। এ কারণে আজও আমরা বিক্ষোভে এসেছি। আমরা তাদের ভোট জালিয়াতির অজুহাত শুনব না, আমরা সামরিক এক নায়কতন্ত্র চাই না।’