রাত ৯:১৭, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: যানজটহীন যাত্রা, যাত্রীর মুখে হাসি

রবিবার সকাল ৬টা। সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য এই প্রথম খুলল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) দ্বার। এর আগেই সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে বেশ কয়েকটি গাড়ি। খুলে দেয়ার পর প্রথম গাড়িতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ১০ মিনিটে সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রী ও চালকরা। এ পথে চলার মধ্যে দিয়ে যানজটের নগরীতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। আর তাই স্বল্প সময়ে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে আনন্দে ও উচ্ছ্বসিত তারা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম দিনে ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করেছে মোট ১৩ হাজার ১৬৫টি। আর এ সময়ে টোল আদায় হয়েছে ১১ লাখ ৮ হাজার ২৪০ টাকা। এদিন উড়ালসড়ক দিয়ে চলাচল করা যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল প্রাইভেট কার।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, প্রথম দিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী মোট গাড়ির ৯০ শতাংশের বেশি প্রাইভেট কার। এই দিন বিমানবন্দরের কাওলা থেকে বনানী-মহাখালী হয়ে ফার্মগেটে চলাচল করা গাড়ির সংখ্যা ৭ হাজার ৭৪৮টি। এছাড়াও কুড়িল থেকে বনানী হয়ে ফার্মগেটে গেছে এক হাজার ৬৩৮টি, বনানী থেকে কুড়িল হয়ে কাওলা গেছে ১ হাজার ৪৩৮টি এবং ফার্মগেট থেকে মহাখালী থেকে বনানী-কুড়িল হয়ে কাওলা গেছে ২ হাজার ৩৪১টি যানবাহন।

গাড়ির চালকরা জানান, ভালো লাগছে, প্রথম এ পথে যানজট ছাড়া গাড়ি চলতে পারছি- এটা ভেবেই ভালো লাগছে।

এক নারী যাত্রী জানান, প্রতিদিন অফিসে বিমানবন্দর এলাকাতে আসতে দুই ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হতো, এখন আর সেই সময় লাগবে না। এটা ভেবেই ভালো লাগছে। অফিসে কাজের গতিও বেড়ে যাবে।

গাড়ির চালকরা জানান, অল্প সময়ে যেতে পারব, এটা ভেবেই ভালো লাগছে। এমনও সময় গেছে দুই থেকে আড়াই বা ৩ ঘণ্টাও সময় লেগেছে এই পথে। এখন ১০ থেকে ১১ মিনিটে চলে যেতে পারব।

ফার্মগেটে নামার পথে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের। তিন চাকার যান চলাচলে অনুমতি নেই; তাই আক্ষেপ তাদের। তারাও চান এ পথে গাড়ি চালাতে।

আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তখন এর পুরো সুফল পাবে নগরবাসী।

গত শনিবার বিকালে কাওলা প্রান্তে টোল দেয়ার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গাড়িবহর নিয়ে পাড়ি দেন ফার্মগেট প্রান্ত।

সকাল ৬টায় খুলে দেয়া হয় স্বপ্নের এই উড়াল সড়কের বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও অংশের সাড়ে ১১ কিলোমিটার। খুলে দেয়ার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়তে থাকে।

প্রথম দফায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এই অংশের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে ফার্মগেট আসতে সময় লাগছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।

নতুন এই পথে চলাচলকারীরা মনে করছেন, ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত রুট এটি। ঢকিার এ উড়াল সড়ক চালু হওয়ায় একদিকে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে, অন্যদিকে নিচের সড়কে গাড়ির চাপ কমবে। এতে দুর্বিষহ যানজটের স্বস্তি মিলবে। বাঁচবে ঢাকাবাসীর অনেক কর্মঘণ্টা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নেয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া এবং নকশায় জটিলতায় এর নির্মাণ কাজে কেটে গেছে অনেক সময়।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলে টোল দিতে হবে। এজন্য যানবাহনকে চার শ্রেণিতে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে টোল। এতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে টোল এবং ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীরা চলাচল করতে পারবে না। আর মোটরসাইকেল এখনই চলতে দেয়া হবে না। এছাড়া গাড়ি নিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র‌্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র‌্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

উড়াল সড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়াল সড়ক ১৯.৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে। র‌্যাম্পসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

চলবে বিআরটিসির ৭৯ বাস

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ৭৯টি বাস চলাচল করবে আগামীকাল সোমবার থেকে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা যাতে কম সময়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর হয়ে উড়ালসড়ক দিয়ে তেজগাঁও-ফার্মগেট হয়ে বিভিন্ন রুটে চলবে এসব বাস। ভাড়াও নেয়া হবে বর্তমান তালিকা অনুযায়ী। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে কম সময়ে চলাচল করতে পারে তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাত্রী বাড়লে ভবিষ্যতে এসি বাস চালানোরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।