দুপুর ২:৪৭, ৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
খ্রিষ্টীয় নতুন বছর বরণের চিরায়ত যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা প্রতিবছর দেখা যায়, এবার ছিল তার ভিন্ন চিত্র। বৈশ্বিক মহামারি করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত বিশ্বের প্রায় সব জনপদ। সঙ্গত কারণেই এবার অনেকটা নিরুত্তাপ ও আড়ম্বরহীনভাবেই স্বাগত জানানো হলো খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ‘২০২১কে’।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক- সব জায়গায় জনসমাগম ছিল সীমাবদ্ধ। করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণের ভয়েই সমগ্র ইউরোপজুড়ে জৌলুসহীন ছিল বর্ষবরণের উৎসব। আর নতুন বর্ষের পার্টি ভঙ্গ করতে ফ্রান্সে মোতায়েন করা হয় এক লাখ পুলিশ। খবর বিবিসির
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৮ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এক বছর আগে শুরু হওয়া এই মহামারিতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে আট কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।
ইউরোপে কেমন হলো বর্ষবরণ?
ফ্রান্স সরকার শহর এলাকায় দৃশ্যমান নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে কারফিউ শুরু হয়। প্যারিসের অর্ধেক মেট্রোলাইন বন্ধ ছিল। নতুন বছরের ভাষণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন দেশটিতে ভ্যাকসিনের ধীরগতি নিয়ে সমালোচনার জবাব দেন। ভ্যাকসিন নিয়ে অনর্থক বিলম্ব না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
ইংল্যান্ডে নতুন ধরনের ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার হচ্ছে। ২ কোটি মানুষ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে যুক্তরাজ্যের জনগণকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়। নতুন বছরের প্রাক্কালে লন্ডনের রাস্তা নীরব ছিল। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সবাইকে আইন অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
জার্মানিতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আংশিক লকডাউন কার্যকর রয়েছে। সরকার আতশবাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করে এবং জনসমাগম হতে পারে এমন সব স্থানে বিশেষ নজরদারি করে।
ইতালিতে রাত ১০টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়। বার, রেস্টুরেন্টসহ সব দোকান-পাট ছিল বন্ধ। দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথার কারণে পোপ ফ্রান্সিস নতুন বছরের প্রাক্কালে এবং নতুন বছরের দিনে কোনো কর্মসূচি রাখেননি।
আমেরিকায় যেমন বর্ষবরণ
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শহর ও রাষ্ট্রে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপনে বিধি-নিষেধ আরোপ করে। নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে স্বল্প সংখ্যক লোককে বিশেষ করে করোনার প্রথম সারির যোদ্ধাদের মিডনাইট বাল্ব ড্রপ দেখার জন্য জড়ো হবার অনুমতি দেয়া হয়। সেলিব্রেটিরা টেলিভিশনে অভিনয় করেন। নতুন বছরের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কারকে মেডিকেল মিরাকল বলে অভিহিত করেন।
এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বর্ষবরণ যেমন ছিল
নতুন বছর প্রথম পালনে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়। তবে শহর হারবারে লোক সমাগম নিষিদ্ধ ছিল। সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী গ্লাডিস বেরিজিকিলিন বলেন, নতুন বছরের প্রাক্কালে আমরা করোনা দ্রুত বিস্তার করে এমন কোনো অনুষ্ঠান পালন করতে চাই না। সিডনি শহরের বাসিন্দারা বাড়িতে বসে টেলিভিশনে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
চায়নার রাজধানী বেইজিংয়ে নতুন বছরের আলোকসজ্জা প্রদর্শন করা হয়। দেশের প্রায় সমস্থ শহরে উদযাপন সীমাবদ্ধ করা হয়। উহান শহর যেখানে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল সেখানে হাজারো লোক জড়ো হয়ে আকাশে বেলুন ওড়ায়।
অন্যবছরগুলোতে জাপানের সম্রাট নারুহিতো ও রাজ পরিবারের অন্য সদস্যরা জনগণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। কিন্তু এ বছর তা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ভারতের দিল্লিসহ কয়েকটি শহরে রাত্রীকালীন কারফিউ আরোপ করা হয়। বড় ধরনের লোক সমাগম প্রতিরোধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
নিউজিল্যান্ডে করোনার কারণে কঠোর লকডাউন ও সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। তবে সেখানে যথারীতি নতুন বর্ষের উৎসব উদযাপন করতে দেখা গেছে।