রাত ১১:০২, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে আ.লীগ, সংবিধানের বাইরে যাবে না সরকার

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ১৫ মাস বাকি। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ দখলে রাখতে মুখোমুখি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপি বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও স্পর্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদিও আগামী জাতীয় নির্বাচন সহজ হবে না বলেও মনে করেন তারা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী রোডম্যাপ তৈরি করে দল গোছানোর কাজ করছেন নেতারা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৩ সালের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে এবং ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে ভোট-গ্রহণ হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

নিবার্চনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে দাবিত প্রতিনিয়ত আনন্দোলন করছে বিএনপি। এছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও বাম দলগুলো নিবার্চনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে দাবিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

বিরোধী দলগুলোর এমন দাবির প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন, যে কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে। সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনের সময় সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক কাজ করবে বাকি সব ইসির করবে।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও কথা বলছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের ভাষ্য, সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংবিধানের বাইরে একচুলও সরতে নারাজ আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গীরাও।

এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পাটিও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে দো-টানায় রয়েছে। তবে তাদের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আপত্তি না থাকলেও ইভিএম’র ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে জাতীয় পার্টি।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই বিএনপি এবং তাদের শরিকরা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন মায়া, বীরবিক্রম বলেন, সংবিধান হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তিত হবে। এর বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে আমরা সবসময় ছিলাম, এখনও আছি। দেশ পরিচালনায় যাতে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি না হয়, তাই আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চাই। কে কী বললো-এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তবে মানুষ ইভিএম চায় না। আমরাও শুরু থেকে নির্বাচনে ইভিএম’র ব্যবহারের বিপক্ষে। আমরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেইনি। আমরা বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। জনসাধরনের স্বার্থেরি বিষয় বিবেচনায় রেখে, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে চাই না। সংবিধানের বাইরে যাওয়া ঠিকও হবে না।

১৪ দলের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, এমপি বলেন, সংবিধানের আলোকেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। আমরা সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন চাই।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছেন। সেজন্য এ সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যান্য বছরের চেয়ে খুব বেশি। বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী নির্বাচনে তৃণমূলকে শক্তিশালী ও সক্রিয় রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ পাচ্ছে। এজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা অনুযায়ী রোডম্যাপ করে সাংগঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিকরা।

গত মাসে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করে বলেছেন,চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের আগে দলীয় সকল সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা, মহানগর, ওয়ার্ড,ইউনিট কমিটিতে সম্পন্ন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন বিগত বছরে মতো এবার জাতীয় নির্বাচন সহজ হবে না। তাই তৃর্ণমুল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে আরও শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। তাই শেখ হাসিনার নিদের্শনা অনুযায়ী রোডম্যাপ করে দলের সাংগঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হতে এখন অনেক সময় বাকি আছে। শুধু সম্মেলন নয় দলকে এগিয়ে নিতে রোডম্যাপ অনুযায়ী সবসময় কাজ করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদককের বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদককের কার কতটুকু কার্যক্রম হয়েছে তার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগে সাংগঠনিক জেলার মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটি সম্মেলন করে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।