সকাল ১১:৪৩, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেছেন, বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির জোগান না বাড়িয়ে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যা সৃষ্টির মূল কারণ।
আজ রবিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ম তামিম জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির জোগান দিতে পারেনি। একই সঙ্গে ভুল ধরনের জোগান দিয়েছে। দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ আনার জন্য একসময় তেলভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। সেটা তিন বা পাঁচ বছর পর্যন্ত রাখার পরামর্শ ছিল। কিন্তু তা না করে এখন পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে তেলের ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। আর এই নির্ভরতার ফলেই আজকের সমস্যা তৈরি হয়েছে।’
ম তামিম বলেন, ‘একসময় আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভাব ছিল ফলে লোডশেডিং ছিল। ২০০৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল কিন্তু প্রাথমিক জালানির অভাব ছিল সেটা এখনো রয়ে গেছে।’
গ্যাস, কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি- এই তিনটি দেশের নিজস্ব জ্বালানির প্রধান উৎস। এ কথা উল্লেখ করে ম তামিম বলেণ, ‘এগুলো ছাড়া অন্য কোনো জ্বালানি উৎস নেই আমাদের দেশে। কিন্তু গ্যাস, কয়লা থেকে প্রাথমিক জ্বালানির জোগানে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। উপরন্তু জ্বালানির আমদানিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। অর্থনীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি করে যাব এটি ছিল সরকারের নীতি।’ বর্তমান সংকট তৈরির পেছনে এই নীতিও কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে যখন কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুরু হয় তখন কয়লা ও তেল আমদানি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল মন্তব্য করে ম. তামিম বলেন, ‘কিন্তু একই সময়ে উচিত ছিল নিজেদের গ্যাসের জন্য অনুসন্ধান চালানো। সেটি হয়নি। পরবর্তী সময়ে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাও অনেক দেরি করে নেওয়া হয়েছে।’
ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ভুল মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ম তামিম। বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাদ দিয়ে দিলে তা আমাদের চাহিদা অনুসারে হবে। অনেক আনজাস্টিফাউড ক্যাপাসিটি চার্জ আছে। এগুলো বাদ দিতে হবে।’
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। দেশে যেকোনো সময় উৎপাদন কমে যেতে পারে। বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে সবচেয়ে বেশি গ্যাস আসছে। এখানকার দু-তিনটা কূপ বন্ধ হলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হবে।
আন্তর্জাতিকভাবেও জ্বালানি আমদানি নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন ম তামিম। বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ইউরোপ এখন রাশিয়ার ওপর গ্যাসনির্ভরতা কমাচ্ছে। এ জন্য সারা বিশ্বে যত জায়গায় যত গ্যাস আছে তা নিতে ইউরোপ হাত বাড়াবে। সে জন্য আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।’
নিজস্ব কয়লার ব্যাপারেও নতুনভাবে ভাবতে হবে বলে মনে করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে যেতে হচ্ছে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সামষ্টিক অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, বহি খাত নিয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
এ ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।