সকাল ১১:৪১, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

খাদ্যে আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি, রেকর্ড ভেঙে ৮.৩৭ শতাংশ

বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে রেকর্ড ভেঙেছে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি। এক মাসের ব্যবধানে তা দশমিক ৭ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একইসময়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত মে মাসে তা ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ হার গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদে এ তথ্য জানা যায়।

বিবিএস জানায়, খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। গত মাসেও তা ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সব খাতেই মূল্যস্ফীতির হার বেশি।

সরকারি এ সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট এর ভিত্তিতে মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয় ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর অর্থ; ২০২১ সালের মে মাসে যে পণ্যের জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের মে মাসে একই পণ্য কিংবা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে হয়।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, নয় বছর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ওই বছর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।

২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে নামে। ওই বছর খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখীই থাকে।

৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছে এ সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে সেটি আবারো বাড়ে।

বিবিএসের তথ্য মতে, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে পৌঁছায়। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসলেও এর পর প্রতি মাসেই তা বাড়ছে।

চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বাড়ার ফলে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানায় বিবিএস।

মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত এবং খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসাধন সামগ্রী, জুতা, পরিধেয় বস্ত্র, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি পণ্য, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এছাড়া জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে বেশি। জুন মাসে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যেখানে শহরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর ফলে শহর থেকে গ্রামের মানুষকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

এদিকে বাজারে লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের দামে কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অথচ বাজেট ঘোষণা করার পরই রেকর্ড হারে বাড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্য।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে একনেক সভায়। তবে গত কয়েক দিনে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। জুলাই শেষে নিত্যপণ্যের দাম আরও কমে আসবে। ভোজ্যতেলেও দৃশ্যমান দাম কমেছে।

হালনাগাদ তথ্যে, চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুগ্ধজাতীয় ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এবং এডিবিসহ অনেক আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে। আর এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি জানান, ‘সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, তবু এ তথ্যকে মেনে নিলেও বলতে হয় একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আ