রাত ১১:৩৯, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
খুলনা প্রতিনিধি : খুলনার মুজগুন্নির বাস্তুহারা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানকালে পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে সংঘর্ষে পুলিশ ও বাসিন্দাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, বাস্তুহারা কলোনির একটি অংশ প্লট মালিকদের জায়গা বুঝিয়ে দিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। শুরু থেকেই টায়ার ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখেন বাসিন্দারা। সকাল ১০টার পর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। এসময় পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া বুলডোজার দিয়ে গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে তারা উচ্ছেদ করতে দিবে না। পুলিশ বলছে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রয়েছে। এ ঘটনায় খালিশপুর থানার ওসিসহ ১৪ পুলিশ আহত হয়েছে।
খুলনার মুজগুন্নির বাস্তুহারার ২ একর জায়গায় বাস করছেন প্রায় ২০০ পরিবার। তবে ১৯৮৭ সালে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ পাশের এই জায়গাটি লটারির মাধ্যমে প্লট আকারে বিক্রি করেন। ৩৫ বছর পার হলেও এখনও জায়গা বুঝে পাননি সেখানকার ৪২ প্লট মালিক।
এদিকে বাস্তুহারা কলোনিতে বসবাসকারীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে ৩৩ একর জায়গা। মাঝখানে হাউজিং অফিস কিভাবে প্লট বানিয়ে মালিকদের কাছে বিক্রি করছে। এখানে বসবাসকারীরা রয়েছে, অথচ ৪২টি প্লট বানিয়ে কিভাবে বিক্রি করে।
তারা বলেন, রোহিঙ্গা যদি এদেশে এসে বসবাস করতে পারে কেন আমরা পারব না। আমরা লিখিত দাবি জানিয়েছিলাম আমাদের অন্য কোথাও জমি দিতে হবে। ওখানে আমরা নিজরাই চলে যাব, যার যার মালামাল নিজেরাই ভেঙে নেব। লিখিতভাবে যাতে পরবর্তীতে কেউ এসে চলে যেতে না বলে।
কলোনির বসবাসকারীরা আরও বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে জানানো হয়েছিল বাস্তুহারা কলোনি একটা সেক্টর উচ্ছেদ করা হবে। এ ঘটনা নিয়ে আমরা ডিসি অফিসে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি, স্থগিত আছে। এরপর ৮-৯ মাস পর শনিবার সন্ধ্যা পর মাইকিং করে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আমরা এখানে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে থাকি। যেখানে উচ্ছেদ করা হবে সেখানে ১৭০ পরিবারে আড়াই হাজার লোক আছে। সকালে ৪টি বুলডোজার নিয়ে আসে। আমরা বলেছি আমাদের কিছু আসবাবপত্র রয়েছে। আর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং আছে। মিটিংয়ে আমাদের যদি চলে যেতে বলে, যাব। কিন্ত তা না শুনে হঠাৎ করে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। মুরব্বি, শিশু, নারী সবাইকে আঘাত করেছে। এসময় ৬০-৭০ জন আহত হয়েছে। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খালিশপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য ছিলাম। তবে তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। এ সময় সরাতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের হামলায় আমিসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।