রাত ১০:৪৫, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুড়িগ্রামে সার ও বীজ সংকট, বিপাকে আগাম সবজি চাষিরা


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে সার ও বীজ সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন আগাম সবজি চাষিরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাড়িয়েছে সারের দাম, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বীজ ও কীটনাশকের মূল্যও। প্রশাসন বলছে বাজারে কোন সংকট নেই, অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু চাষিদের অভিযোগ করার সময় কোথায়? তাকে সময়মতো বীজ বপন করতে হবে। এজন্য অফিসে-অফিসে ধরনা দেয়ার চাইতে অধিক মূল্যেই কিনতে হচ্ছে সার, বীজ ও কীটনাশক। ফলে চড়ামূল্যে সার ও বীজ কিনে সবজির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ি গ্রামে চলছে সবজি চাষের ধুম। চাষিরা আগাম ফুলকপি বুনে লাভের আশা করলেও সার ও বীজের লাগামহীন মূল্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদের। কৃষকরা বলছেন, জমির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অধিক মূল্য চাওয়া হচ্ছে।

মীরের বাড়ি গ্রামের চাষি মকবুল হোসেন বলেন, গতবার ফুলকপির বীজ কিনেছি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এবার সেই বীজ কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। ফলে প্রচুর ব্যয় হচ্ছে। গতবার ১ হাজার ৩০০ টাকার সার এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য সার, বীজ ও কীটনাশক মূল্যের দিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া দরকার।

একই গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, আমাদের এখানকার অনেক চাষি এনজিও থেকে ঋণ করে অথবা গরু বা ছাগল বিক্রি করে অনেক আশা নিয়ে আগাম সবজি চাষ করেন। কিন্তু সঠিক সময়ে সার না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাদের। সেই সাথে দ্বিগুণ মূল্যে বীজ ও সার কিনে খরচ ওঠাতে পারবেন কিনা সেই আশঙ্কায় দিন কাটে।

কৃষক আবদার হোসেন বলেন, শুধু বীজ ও সার নয়। বিরূপ প্রকৃতির সাথেও লড়াই করে আগাম সবজি চাষ করতে হয় আমাদের। বৃষ্টি বা কড়া রোদ হলে বীজের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি কাটাতে আবার অধিক মূল্যে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। চাষবাস করতে এখন কৃষকদের পদে পদে হয়রানি ও অধিক অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা আমাদের।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন নাহার সাথী বলেন, মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম ফুলকপি সরবরাহ করে অধিক লাভের আশায় ফুলকপি চাষ করছেন কৃষকরা। আমাদের উপজেলায় এবার ২৯ হেক্টর আগাম সবজি চাষ করা হচ্ছে। বাজারে প্রচুর সারের সরবরাহ আছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছি। কেউ বেশি মূল্য চাইলে আমরা খবর পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবছর বন্যা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে চরাঞ্চলে রোপা-আমনের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর। ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৪০০ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। ফলে অনেক জায়গায় সারের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে সারের কোন সংকট নেই। আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিটি পয়েন্টে কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে সার বিতরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। তদুপরি বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকটের কথা শোনা যায়। যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা একটি কৃত্রিম সংকটের প্রক্রিয়া করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা সজাগ আছি এবং আমরা অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমরা আশা করছি সারের কোন সংকট তৈরি হবে না এবং আমাদের যে অনুমোদিত বরাদ্দ আছে, আমরা এই বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে পেলে কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করবো।