পৌর কমিশনার থেকে সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু

পৌর কমিশনার থেকে সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু

মাসুদ রানা, ময়মনসিংহ ব্যুরো: বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার কমিশনার থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছেন মোঃ ইকরামুল হক টিটু। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, লড়াই সংগ্রাম এবং জনসম্পৃক্ততা তাকে পৌঁছে দিয়েছে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে। ১৯৭৬ সালের ১লা আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার একটি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যমন্ডিত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা মৃত ফজলে হক, মাতা মৃত মানোয়ারা খাতুনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। ময়মনসিংহের প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এবং মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। এরপর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৎকালীন আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৯৫ সালে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র এবং ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। এর আগে তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া, ২০১৮ সালে তিনি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম প্রশাসক এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিলুপ্ত পৌরসভার মেয়র হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৯ সালে তিনি ৯ নং ওয়ার্ড থেকে প্রথম বিপুল ভোটে কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো কমিশনার নির্বাচিত হন এবং পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মনোনীত হন। ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক পৌর মেয়র এড. মাহমুদ আল নূর তারেক মৃত্যুবরণ করলে পৌর মেয়র পদ শূন্য হয় এবং পরবর্তীতে ইকরামুল হক টিটু প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে থাকায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী ও জনবান্ধব রাজনীতিবিদ। ইকরামুল হক টিটু তাঁর জীবদ্দশায় নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আজ নিজেকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তিনি সবসময় বলে থাকেন, “হয়তো জনগনের সেবা করার জন্য আমাকে মহান আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন”। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ইকরামুল হক টিটু অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। ঘাত-প্রতিঘাত এবং অতীত জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতার মুখে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন, হয়ে উঠেছেন গণমানুষের একজন জনপ্রিয় নেতা। বিভাগ হওয়ার পর ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করার সুযোগ পান তিনি এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ইকরামুল হক টিটু থাকতে চান সব সময় জনতার কাতারে। তিনি বয়স্কদের যেমন সন্মান করেন তেমনি ছোটদের করেন স্নেহ। তাই সকলের মনিকোঠায় ঠাই করে নিয়েছেন তিনি। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে ইকরামুল হক টিটু যেমন সেখানে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছেন, আবার তার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নাগরিকদের জন্য হয়েছেন মানবিকও। তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বাড়িয়েছেন। অনিয়মিত সকল কর্মচারীর জন্য চালু করেছেন বোনাস। মাসের প্রথম সপ্তাহেই পরিশোধ করা হচ্ছে বেতন। চাকুরী শেষে অবসর যাওয়ার পর যাবতীয় সকল সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন কেউ কখনো দেখেননি। কিন্তু ইকরামুল হক টিটু অবসরে যাওয়া স্টাফকে একসাথে তাদের সকল পাওনা পরিশোধ করে দিয়ে মসিক এর ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করেছেন। নবীন এই মেয়র সকলকে সাথে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আগামীর স্মার্ট ময়মনসিংহ নগরী গড়ার। নগরীর সিনিয়র সিটিজেন ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য নগরভবনে একটি হেল্প ডেক্স চালু হয়েছে তার হাত ধরেই।

ইকরামুল হক টিটু শিশুদের ভীষন পছন্দ করেন। শিশু বান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছেন। উৎসবের সময় নতুন পোশাক নিয়ে ছুটে যান এতিমখানাসহ দু:স্থ শিশু নিবাস কেন্দ্র গুলোতে। শিশুদের জন্য পার্ক সংস্কারের পাশাপাশি নগরীতে গড়ে তুলেছেন আরেকটি শিশু পার্ক। রয়েছে যুবকদের জন্যও বিনোদন সাংস্কৃতিকর ব্যবসা। নগরীর সার্কিট হাউস সংলগ্ন জয়নুল আবেদীন পার্কের পাশে তৈরি করেছেন শিশুদের জন্য পার্ক। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন একজন বিবেকহীন শিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন দেশপ্রেমিক অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা অনেক ভালো। আর সেকারনেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বধ্যভূমি সংরক্ষন করেছেন। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ইকরামুল হক টিটু একজন মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকতে চান। সস্তা জনপ্রিয়তা নয়, তিনি নগরীর টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত প্রান ইকরামুল হক টিটু চিকিৎসা কিংবা সন্তানের পড়ালেখা ও বিয়ের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত। করোনাকালীন সময়ে তিনি নগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। নেতা-কর্মীর আশা-ভরসারস্থল ইকরামুল হক টিটু ঘোষনা করেছেন প্রয়োজনে তিনি তাঁর সকল সম্পদ দিয়ে দেবেন দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে একজন নেতা-কর্মীকেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবেন না। তার কর্মজীবন শুরু হয় শামীম এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে। তিনি জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, হোটেল সি ক্রাউন, শামিম এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেড ও শামিম এন্টারপ্রাইজ প্রোপার্টিজ লিমিটেডের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এছাড়াও অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে পর্যটন, পরিবহন, আবাসন, জুটমিল, ফুয়েল পাম্প, কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন তিনি। পেশাগত ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছেন ইকরামুল হক টিটু। তিনি ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পন্ডিতপাড়া ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের সিন্ডিকেট সদস্য, প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের পরিচালনা পর্যদের সভাপতিসহ অসংখ্য সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি বা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইকরামুল হক টিটু’র এর সহধর্মিনী নাছিমা আক্তার মিলা ময়মনসিংহ ইউমেন্স চেম্বার অব কর্মাসের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বড় ভাই মোঃ ইমদাদুল হক পেশায় একজন চিকিৎসক, মেজো ভাই আমিনুল হক শামীম (সিআইপি) ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি এবং দি ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই বোনের মধ্যে ফরহাদ সুলতানা গৃহিনী এবং অন্যজন আনোয়ারা খাতুন অল্প বয়সে অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যু বরন করেন। একটি আধুনিক, বসবাসযোগ্য, সবুজ নগরী বিনির্মাণের নিরীখে সড়ক, ড্রেন, আধুনিক সড়ক বাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, নাগরিক সেবা বৃদ্ধি এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনায় সমৃদ্ধ প্রজন্ম বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

নগরবাসীর উদ্দেশ্যে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বলেন, আমি বিলুপ্ত পৌরসভার কমিশনার থেকে পৌর মেয়র এবং বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছি। যদি করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করতো, তবে আমরা জনগণের প্রত্যাশিত উন্নয়ন নিশ্চিতে অনেকাংশে সফল হতাম। আমি আশাকরি সম্মানিত নগরবাসী যেমন অতীতে আমার পাশে ছিল, ঠিক তেমনি আগামী ৯ মার্চ আমাকে তাদের সেবক হিসেবে পুনরায় বেছে নিবেন।

More News...

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ