বিজন কুমার বিশ্বাস, কক্সবাজার : দুইমাস ধরে লড়াইয়ে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি, মর্টারশেলের শব্দে বাংলাদেশের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যংসহ বিভিন্ন এলাকায় ওপার থেকে মর্টারশেল ও বুলেট ছুটে আসার কারণে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
নিরাপত্তার কারণে ইতিমধ্যে ঘুমধুমের আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ করেছে প্রশাসন। সম্প্রতি মিয়ানমারের গোলা সীমান্তের এপারে এসে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় বিদ্যালয় গুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষে ওপারে মিয়ানমার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে দুই মাসের অধিক সময় ধরে।
মাঝে মাঝে কামানের গোলা নিক্ষেপ ও বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমার অংশে তিন দিনে অর্ধশতাধিক মর্টারশেলের বিকট শব্দে প্রকল্পিত হয়ে ওঠছে সীমান্ত এলাকাগুলো। উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে সীমান্তের কাছাকাছি হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, একটি মর্টার শেল হোয়াইক্যং উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর পশ্চিমকূল এলাকার এক প্রবাসীর বাড়িতে এসে পড়ে এরপর আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। ওই প্রবাসীর স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, ঘরের দরজায় বসে মুঠোফোন কথা বলার সময় বাড়িতে গাছের সঙ্গে গুলি লাগলে একটা বিকট শব্দ পাওয়া যায় তবে এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার মাদ্রাসাসহ আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়েছে।
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মিয়ানমারের গোলা বর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণকে আশ্বস্ত করতে সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, কেউ যেন আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নতুন করে প্রবেশ করতে না পারে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি জান্তার শাসনে থাকতে চায় না। তারা রাখাইন রাজ্যকে স্বীকার করে না। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই রাজ্যকে আরাকান বলে মনে করে। তাদের মতে, আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। বার্মার রাজা আরাকান দখল করে রাজ্যটিকে দেশটির অন্তর্ভুক্ত করে।