রাত ৩:১৪, ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন : তাসনুভা আনান শিশির। নামটি দুদিন আগেও ছিল বড্ড অচেনা। কিন্তু সেই নামটি এখন দেশের মিডিয়া ছাড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের শক্তিশালী মিডয়াতেও।
তাসনুভা আনান শিশির, গত ৮ মার্চ থেকে নিয়মিত সংবাদ পাঠ শুরু করেছেন বৈশাখী টিভিতে। তাসনুভার এই সংবাদ পাঠের খবর ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। বেশ প্রশংসা করা হচ্ছে তাসনুভার এই অগ্রযাত্রাকে।
তাসনুভাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আল-জাজিরা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডন, ডেইলি মেইলের মতো জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশের এই বিশাল মাইলফলকের অগ্রদূত হয়ে থাকলেন শিশির। কিন্তু তার এই পথে ছিল বিরাট বিরাট বাধা। যা পেরোতে পারাটাই আকাশছোঁয়ার মতো ব্যাপার।
দেশের গণমাধ্যমে তাসনুভার নিয়োগের খবর আসার পরই তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর অনেকেই তার চেষ্টা ও শ্রমের প্রশংসা করছেন। তবে তার এই সফলতার পেছনে আছে অনেক কষ্ট আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। একটু একটু কথা বলে জানা গেছে তার সংগ্রামের কথা।
খুলনার বাগেরহাটে জন্ম নেয়া তাসনুভা সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ১৯৯১ সালের ১৬ জুন পৃথিবীর আলো দেখেন তাসনুভা। তবে আর চার-পাচঁটা ছেলেমেয়ের মতো বেড়ে উঠেনি তার শৈশবকাল।
প্রকৃতির দানই তাকে শৈশব থেকেই মানুষের কাছে হাস্য-রসিকতার পাত্র বানিয়ে দেয়। সবার হাসি-তামাশার কারণে অনেকটাই বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি।
শিক্ষা অর্জনের পথে ছিলো আরো বিভীষিকা।পড়াশোনা করতে গিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয়েছে তাসনুভাকে। স্কুলে গেলেই নানা মন্তব্য করতে তাকে নিয়ে। এমনকি তাকে হ্যারেজমেন্টও করা হয়েছে অনেক বার। এ কারণে তার পড়ালেখায় বেশ ক্ষতি হয়েছিল বলা জানান তাসনুভা।
নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে আরও এক বছরের জন্য মাস্টার্স করেন।
তাসনুভা চান অন্য ট্রান্সজেন্ডাররা যোগ্যতা অর্জন করুক। ভালো পেশা বেছে নিক। অন্য ট্রান্সবোনদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তাসনুভা বলেন, তদের সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ; যোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে বেশি দরকার। তাই তারা যেন আপনার জেন্ডারটা না দেখে গুণটা দেখেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া।
সবাই যোগ্যতা দেখেন। কারণ, যোগ্য ব্যক্তিকে কখনো দমিয়ে রাখা যায় না। তাই যার যতটুকু মেধা আছে, জ্ঞান আছে; ততটুকু কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা অর্জন করা বেশি জরুরি।