রাত ১:৫৯, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি শুরু

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। সোমবার রাজধানীর দুইটি ও নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলের ১১ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিন, জরায়ু ক্যানসার রুখে দিন’, এই প্রতিপাদ্যে দেশে শুরু হলো ‘এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি-২০২৩’। দেশে সরকারিভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী শিক্ষার্থীদের টিকাদানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো এই কার্যক্রম।

সোমবার জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় (ইপিআই) এই টিকাদান শুরু হয়।

টিকা নেওয়া ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুলের সাত জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন, ডিপিএস স্কুলের ২ জন এবং নারায়ণগঞ্জ সরকারি স্কুলের একজন ছিলেন।

ইপিআইয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী একটি নীতিমালা করা হয়ে হয়েছে। মোট টিকা পাওয়ার যোগ্য ৯৫ ভাগকে দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। তিন ধাপে এই টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা বিভাগের সব স্কুলে দেওয়া হবে এই টিকা। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম ও বরিশালে চলবে এই টিকাদান এবং এর পরের ধাপে সারা দেশে দেওয়া হবে। এখনই মূল টিকাদান কর্মসূচি শুরু না হলেও অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখে শুরু হবে মূল কার্যক্রম।

অনুষ্ঠানে ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে যেভাবে টিকা নেওয়া যাবে, তা প্রদর্শন করা হয়। ওয়েব সাইটটি হলো vaxepi.gov.bd । এই সাইটে শুধু এইচপিভি ভ্যাকসিন ছাড়াও নিবন্ধনকৃতদের জন্য প্রযোজ্য ইপিআই-এর যেসব টিকা নিতে পারবে, তাও জানানো হবে। চাইলে সেসব ভ্যাকসিন নিতেও আবেদন করতে পারবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইপিআইয়ের মাধ্যমিক ১৩টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আর এই কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। জরায়ুমুখের ক্যানসারের এই টিকাদানের মাধ্যমে আমরা দেশে আরও একটি মাইলফলক অর্জন করছি। এই জরায়ুমুখ ক্যানসার নীরব ঘাতক। প্রতি বছর দেশে ৫ হাজার নারীর মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বে ৩ লাখের মতো নারী এই রোগের কারণে মারা যায়। যেহেতু একটি ভাইরাসের মাধ্যমে এই ক্যানসার হয়ে থাকে, তাই এই ভ্যাকসিন নারীদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে।

জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দেখেছি এই ভ্যাকসিন নিরাপদ। সাইড ইফেক্ট নেই। এই ভ্যাকসিন নিয়ে সারাজীবনের জন্য ক্যানসার থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। তবে তার মানে এই না যে, স্ক্রিনিং করা লাগবে না। নারীদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, সোমবার থেকে সীমিত আকারে শুরু হচ্ছে এই কার্যক্রম। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১ কোটি শিশুকে এই টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। আমরা আশা করি, তারা জরায়ুমুখ ক্যানসার মুক্ত থাকবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, বাংলাদেশ ভ্যাকসিন ফ্রেন্ডলি দেশ। করোনা টিকাদানেও আমরা সফলতা অর্জন করেছি। এবারও তা সম্ভব হবে। আমরা এক ডোজের এই টিকার বিষয়ে মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সব প্রতিষ্ঠানেই লিফলেট বিতরণ করবো। রুটিন ভ্যাকসিনের জন্য আমরা এই ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করবো। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করবো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে গত জুলাইয়ে দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে কিশোরীদের তথ্য নেওয়া হয়।

প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভায় অবস্থিত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির কিশোরী শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের বিদ্যমান ইপিআই’র স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে এক ডোজ করে মোট ২৩ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে।

টিকা গ্রহণের আগে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য জন্মনিবন্ধন এবং মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের পর টিকাকেন্দ্র নির্বাচন করে টিকা কার্ড ডাউনলোডের পর সেটি নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে।

ইপিআই’র দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে নারীদের ক্যানসার জনিত মৃত্যুর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানাসর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী অথবা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত কিশোরীদের জন্য এই টিকা অধিকতর কার্যকর। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট। এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর।