রাত ৩:৩৩, ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

ছয়টি গ্রুপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয় চক্রটি: ডিবি

ছয়টি ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয় একটি চক্র। তাদের এই ফাঁদে পা দেন অনেক অভিভাবক। এতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

রবিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

আটককৃতরা হলেন- কারিমুল্লাহ, আল রাফি ওরফে টুটুল এবং আবদুল্লাহ আল মারুফ। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের পুবাইল ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম কার্ড এবং নগদ ১২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের এসএসসি তিনটি পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হবে। শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ মিটিং করেছেন যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার শুরুতেই একটি সাইবার চক্র সক্রিয় হয়। এমন খবর পেয়ে ডিসি ডিবি গুলশান মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিন প্রতারককে আটক করা হয়। এই গ্রুপটি ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয়। তারা অভিভাবকদের সার্কুলারও দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময়ে কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়।

ডিএমপির এই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রটি মূলত বিভিন্নভাবে ভুয়া ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়।

হাফিজ আক্তার বলেন, আটককৃতরা বিভিন্ন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এই মর্মে সার্কুলেশন করতো যে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্নজনকে মেসেঞ্জারে, টেলিগ্রাফে এবং জিমেইলে সেন্ড করে দেবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫০০ থেকে দুই টাকা করে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেইজ এবং গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৭০০।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক কারিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আল রাফি ওরফে টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর আবদুল্লহ আল মারুফ ওরফে তপু হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক, পাবলিক গ্রুপগুলো হলো কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিংক পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, অল এক্সজাম হেল্পিং জোন, এসএসসি ২০২১ অল বোর্ড ইত্যাদি।

আটককৃত আল রাফি ওরফে টুটুল পাবজি খেলায় পারদর্শী এবং সাইবারসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। তিনি ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আলমগীর হোসেন নামে একটি ফেসবুক আইডি খোলেন।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, এই ধরনের গুজবে যারা জড়াবেন তাদের পরীক্ষাটিও নষ্ট হবে। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তাই সবাইকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেব। কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব চক্রদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন, গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান, গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সরদার উপস্থিত ছিলেন।