দুপুর ১:২১, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে যেসব বিপদ ডেকে আনে

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দুনিয়া হাতের মুঠোয়। হাতের মু্ঠোয় নিয়ে চলা যায় এমন ডিভাইস হলো স্মার্টফোন। স্মার্টফোন বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনযাত্রাকে করে দিয়েছে সহজ এবং আরামদায়ক। মহামারি করোনায় বেড়েছে স্মার্টফোনের ব্যবহারও। প্রযুক্তির এই ব্যাপক উৎকর্ষ একদিকে যেমন সুফল বয়ে এনেছে, তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারে রয়েছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ডেকে আনতে পারে অযাচিত বিপদ। ক্ষতি হতে পারে ত্বকের। হতে পারে ব্রণ। স্মার্টফোনের প্রতিটি অংশে থাকে অসংখ্য জীবাণু। কানে ফোন লাগিয়ে কথা বলার জেরে যা ছড়াতে পারে।

হাতে ধরে ফোন কানের কাছে আনায় মুখ, নাকের মতো অঙ্গের মাধ্যমে ফোনে থাকা জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

দৈনন্দিন ভিত্তিতে ফোন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপস দিয়ে পরিষ্কার করলে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা কম।

অন্য কারোর হাতে ফোন দিলে বা বাড়তি স্মার্টফোনের ব্যবহারে ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ঘরে ব্যবহারের সময় না হলেও বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে ফোন প্লাস্টিক কভারে মুড়ে রাখলে অ্যালার্জির আশঙ্কা কমবে।

স্মার্টফোনের নীল আলো বা আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের রেটিনার জন্য ক্ষতিকর। টানা অনেকক্ষণ ধরে অতিরিক্ত পরিমাণ স্মার্টফোন ব্যবহার রেটিনার মারাত্নক ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ম্যাকুলার ডিজেনারেশান বলা হয়। ম্যাকুলার ডিজেনারেশানে আক্রান্ত ব্যক্তি তার চোখের দৃষ্টি

অনেকটাই হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং এটি আস্তে আস্তে যে কাউকে চিরতরে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

চোখের থেকে একটু দূরে রেখে ও টানা ব্যবহারের বদলে কিছুটা বিরতি নিয়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রে ত্বকের একাধিক সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল ফোনের ব্যবহারে অন্যান্য বাজে অভ্যাস তৈরি হয়, যাতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।

চিকিৎসকের মতে, মেরু রজ্জুর উপর বাড়তি প্রেসার দেয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে এবং এই সংখ্যা ২০১৪ এর তুলনায় ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে তারা স্মার্টফোন এ বিভিন্ন টেক্সটিংকে বেশি দায়ী করছেন।

গবেষকেরা বলছেন, অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহারে তরুণদের মধ্যে যে শারীরিক সক্রিয়তা কমে, তাতে অকালমৃত্যু, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও নানা ধরনের ক্যানসার হতে পারে।

স্মার্টফোন স্নায়বিক সমস্যার জন্যও দায়ী। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে আমাদের মেরুদন্ডের শুরু থেকে মস্তিষ্কে যে স্নায়ুর সাহায্যে সংযোগ স্থাপিত আছে তা অতিরিক্ত চাপে সংকুচিত হয়ে যায় কিংবা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে দেখা দিতে পারে তীব্র মাথা ব্যাথাসহ মাইগ্রেইন সমস্যা। স্মার্টফোন যে শুধু শারীরিক বা মানসিক সমস্যা তৈরি করে তা নয় এর অতিরিক্ত ব্যবহার আপনাকে মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন এবং হতাশ করে তুলবে।

এছাড়া স্মার্টফোন এ অতিরিক্ত গেম খেলা আপনার অনেক প্রয়োজনীয় কাজ আপনাকে সুষ্ঠুভাবে করতে দিবে না। বরং এসব আসক্তি আপনাকে সামাজিকভাবে মানুষ থেকে দূরে রাখবে, যা সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের পথে বড় বাঁধা।

ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক সব জায়গায় এর লক্ষণীয় খারাপ প্রভাব পড়ে। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ডেকে আনতে পারে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার।

বিভিন্ন গাড়ি এক্সিডেন্টসহ পারিবারিক-সামাজিক অশান্তি ডেকে আনতে পারে এর অতিরিক্ত ব্যবহার। তাই এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

সুস্থ থাকতে ফোনের ব্যবহার কমিয়ে আরও বেশি ব্যায়াম ও শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানোর নানা কাজে যুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।