দুপুর ১:২৯, ৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই মানিকগঞ্জের গ্রামে গ্রামে বইতে শুরু করেছে শীতের হিমেল হাওয়া। শীতের আগমনি বার্তার সঙ্গে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে খেজুর গাছ। সারাবছর অযত্নে পড়ে থাকা এসব গাছ এখন গাছিদের (রস সংগ্রহকারীদের) কাছে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এরই মধ্যে তারা গাছ পরিষ্কার, ছাল ছেঁটে দেওয়া ও বাঁশের নল তৈরি করে রাখছেন। সকাল-সন্ধ্যা গাছ প্রস্তুতের কাজে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে গ্রামাঞ্চল।
মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমির আইল, রাস্তার পাশ ও পুকুর পাড়ে বছরজুড়ে অযত্ন-অবহেলায় থাকা খেজুর গাছগুলোও যত্ন শুরু হয়েছে। এসব গাছ থেকে শীতজুড়ে সুমিষ্ট রস পেতে সকাল-সন্ধ্যা এক গাছ থেকে অন্য গাছে ডাল কেটে পরিষ্কার করতে ছুটছেন গাছিরা। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন তারা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথা শুরু করেছেন।
গাছিরা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতেই তারা খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই গাছ থেকে রস ঝরতে শুরু করবে। সেই রস দিয়েই তৈরি হবে সুমিষ্ট খেজুরের পাটালি গুড় ও বিখ্যাত হাজারি গুড়। যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। শীতের সময় খেজুর রস ও গুড়ের বাজার বেশ লাভজনক। তাই আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তারা।
রাজশাহী থেকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার উভাজানী গ্রামে এসেছেন রাজ্জাক মোল্লা। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় আমি প্রায় ১০ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে আসছি। এ বছরও ৭০টির বেশি খেজুর গাছের তোলার (পরিচর্যা) কাজ শুরু করেছি। আমি নিজেই সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করি। প্রতি শীতেই এ কাজ থেকে ভালো আয় হয়।’
একই এলাকার বাসিন্দা ছালাম মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর শীতের আগে মানিকগঞ্জে আসি। এখানে এসে এলাকার মানুষদের কাছ থেকে দাম ধরে খেজুর গাছ নিই। সেই গাছের পেছনে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তারপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে পারি। সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি।’
ঝিটকা কলাহাটা গ্রামের গাছি আমজাদ গত ২০ বছর ধরে হাজারি গুড় তৈরি করছেন। তিনি সেই গুড় ঝিটকা বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু হাজারি গুড় তৈরি করি। এই গুড় তৈরির একটি বিশেষ প্রক্রিয়া আছে। যে কেউ চাইলেই হাজারি গুড় তৈরি করতে পারে না। আমি আমার বাবার কাছ থেকে এই গুড় তৈরির কৌশল শিখেছি। আবার সব রস দিয়েও এই গুড় তৈরি করা যায় না। এ বছর ৫০টি গাছের রস সংগ্রহ করে হাজারি গুড় তৈরি করব।’
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজাহান সিরাজ , ‘মানিকগঞ্জ জেলার গাছিরা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খেজুর গাছের যত্ন নেওয়া শুরু করেছে। এই জেলায় প্রায় ৮ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা সম্ভব। এ জেলার মধ্যে শুধু হরিরামপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকা থেকে হাজারি গুড় তৈরি করা হয়। এই হাজারি গুড় তৈরি করার জন্য দক্ষ গাছিরা নির্দিষ্ট কিছু গাছ বেছে নেন।’