সকাল ১০:৫৬, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গোমতীর চরে লাউশাক চাষে কৃষকের মুখে হাসি


কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার গোমতী নদীর চরের জমিগুলোতে লাউশাক চাষ করে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। খুবই কম খরচে লাভবান হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে লাউশাক চাষকে বেছে নিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। আগাম শীতকালীন অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে লাউশাক চাষের দিকে বেশি মনযোগী হচ্ছেন তারা।

সারাবছরই দেশের বাজারগুলোতে লাউশাকের চাহিদা রয়েছে। লাউশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে গোমতী নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন লাউশাক উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। লাউয়ের ব্যবসা মন্দার দিকে যাওয়ায় লাউশাককে অর্থ রোজগারের অন্যতম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন গোমতী নদীর চরের চাষারা।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ভান্তি এলাকায় গিয়ে লাউশাক চাষে কৃষকদের ব্যস্ততা চোখে পড়েছে। গোমতী নদীর চরাঞ্চলের এসব জমির বেশিরভাগ জমিতেই লাউশাক চাষাবাদ হচ্ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একবার চারা রোপণ করার পর তিন থেকে চারবার কাটা যাচ্ছে। একবার কাটার ১০-১২ দিনের মাথায় আবার লাউয়ের ডগা কেটে সেগুলো বাজারে পাঠানো হচ্ছে। ৬টি ডগা দিয়ে একটি আঁটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আঁটি ৩০ টাকা করে পাইকারের কাছে বিক্রি করছেন কৃষকরা।

আবহাওয়া যেমনই থাকুক। রোদ কিংবা বৃষ্টি, লাউগাছে সেসবের কোনো প্রভাব পড়ে না। এ বছর ওই এলাকার মুলা চাষিদের মাথায় বাজ পড়েছে অসময়ে অধিক বৃষ্টির কারণে। অপরদিকে বৃষ্টির ফলেও লাউ গাছের কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না। যেকোনো আবহাওয়াতে ফলন থাকে স্বাভাবিক। তাই লাউশাক একটি লাভজনক শাক হিসেবে উৎপাদন করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গোমতী নদী তীরের পশ্চিম পাশের চরের জমিগুলোতে সবুজের মিছিল চলছে। প্রতিটি জমিতে সবুজ ফসলের পসরা। কোনো কোনো জমিতে মুলা, আলু, মিষ্টি কুমড়ার চারা দেখা গেলেও জমিগুলোর বেশিরভাগেই লাউশাকের চারা।

ছোট থেকে মাঝারি আকারের এসব লাউগাছ বেয়ে ওঠার আগেই ডগা কেটে ফেলা হচ্ছে। তাই প্রয়োজন হচ্ছে না বাঁশ বা বাঁশের তৈরি মাচার। শুধু নামে মাত্র সার-ওষুধে বছরের একটা অংশ জুড়ে থাকে লাউ গাছের চাষ। লতা বেয়ে ৩-৫ ফুট আকার ধারণ করার পর ডগার গোড়ায় কেটে ফেলেন কৃষক। সেসব গোড়া থেকে নতুন ডগা বের হয়। এসব ডগা আবার ৩-৫ ফুট লম্বা হতে সময় নেয় ১০-১২ দিন। আবার সেই ডগাগুলো কেটে ফেলা হয়। এভাবে একবার চারা লাগানোর পর ৩-৪ বার ডগা কেটে সেই ডগাগুলোই আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠাচ্ছেন কৃষকরা।

ভান্তি এলাকার বাসিন্দা কৃষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এক কানি (১২০ শতক) জমিতে লাখ টাকার মতো শাক বিক্রি করছি। এই ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শাক উৎপাদনে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩৬-৪০ হাজার টাকা। আগে লাউ চাষ করতাম। লাউয়ের চাহিদা কম এবং লাভ না হওয়ায় লাউশাক চাষ করছি।

তিনি আরও বলেন, লাউশাক উৎপাদনে খরচ খুবই কম। যেকোনো আবহাওয়াতেই উৎপাদন ঠিক থাকে। শীতের আগাম সবজি যেমন মুলা, লালশাক, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি সবজির চেয়ে লাউশাকে লাভ বেশি। মোট কথা একদম কোনো ঝুঁকি নেই এই ব্যবসায়। লাভ আছে অনেক।

মো. জাকারিয়া নামের এক কৃষক বলেন, লাউশাক একটি লাভজনক ফসল। এই ফসলে কোনো ঝুঁকি নেই। খরচও অনেক কম। তাই আমরা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে লাউশাক চাষ করছি। আমাদের এলাকার অনেকেই এখন লাউশাক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।

বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আফরিণা আক্তার বলেন, লাউশাক যেকোনো আবহাওয়াতেই চাষাবাদ করা যায়। কম খরচে অধিক লাভ লাউশাকে। চরের কৃষকরা এখন লাউশাক উৎপাদনে বেশ মনযোগী হচ্ছেন। গোমতীর চরে ১০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে লাউশাক চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের লাউশাক চাষে নানান দিকনির্দেশনাসহ অন্যান্য কৃষি প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করছে।