সকাল ১০:৫৪, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ‘আমার ছেলে কইছিল বড় ইলিশ তো এখন হস্তা, আমরা একটু খামু। দামের কালে তো বড় মাছ খাইতে পারি না, এ জন্যই অবরোধে ইলিশ কিনতে গেছিল আমার ছেলে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ইলিশ কিনতে গিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে নিহত রাসেল খানের মা জমিনা বেগম।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাসেল খানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পুরো বাড়িজুড়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের আহাজারি। মাঝে মাঝেই রাসেলের মা ছেলের নাম ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। রাসেলের ছোট ছেলে রিফাত (১২) যেন পাথর হয়ে গেছে। পাশে বসে নির্বাক তাকিয়ে আছে বাবার ছবির দিকে। রাসেলের স্ত্রী পপি বেগম ভেঙে পড়েছেন দুশ্চিন্তায় তিনি বলেন, এখন বাচ্চাগুলারে কেমনে মানুষ করব?
রাসেল স্থানীয়ভাবে বাড়ির সামনে ছোট একটি দর্জির দোকান চালাতেন। তার উপার্জনেই চলত সাত সদস্যের পরিবার। বাবা আব্দুর রব খান বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না, ছোট ভাই মিরাজ স্থানীয় গাছ কাটার মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। রাসেলের সংসারে রয়েছে স্ত্রী, দুই সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই। ছোট মেয়ে রাফসানার বয়স মাত্র তিন বছর।
রাসেলের স্ত্রী ও দুই সন্তান
নিহত রাসেল খানের মা জমিনা বেগম বলেন, ‘আমার পোলার লগে যারা আছিলো, তারা চিৎকার দিতাছিলো, আমাগো লোক একটা পইরা গেছে। আমাগো লোকটা একটু উদ্ধার করেন। তারা (নৌ পুলিশ) উদ্ধার না কইরা মাছ লইয়া হোগোরে আনা ধরছে। পরে আবার ফেরত গেছে। তহন আমার পোলারে আর খুইজ্জা পায় নাই।’
অন্যদিকে নিহত রাসেলের ছোট ভাই মিরাজ অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই চন্দ্রদ্বীপ থেকে খাওয়ার মাছ কিনে খেয়া ট্রলারের পেছনে আরেকটি ট্রলার নিয়ে ফিরছিল। তখন কেউ নৌ পুলিশকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল যে, তারা মাছ নিয়ে আসছে। আমার ভাইসহ ট্রলারে চারজন ছিল। এর মধ্যে দুইজন খেয়া ট্রলারে উঠে যায়, আমার ভাই তখন নিজের ট্রলারে দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখন নৌ পুলিশের ভাড়াটে স্পিডবোটের চালক স্বপন ট্রলারে ধাক্কা দেয়, এতে আমার ভাই নদীতে পড়ে গিয়ে স্পিডবোটের নিচে চলে যায়। কিন্তু নৌ পুলিশ তখনো তাকে উদ্ধার করেনি।
এ বিষয়ে কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মামুন বলেন, এসআই মনির তার সঙ্গীয় দুইজন ফোর্স নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযানে যাচ্ছিলেন। তখন তারা মাছ কিনে চন্দ্রদ্বীপ থেকে ফিরছিল। আমাদের স্পিডবোট থেকে আনুমানিক ৬০-৭০ গজ দূরে থাকা অবস্থায় রাসেল নিজের গেন্জি খুলে নদীতে লাফ দিয়েছে। এখানে স্পিডবোটের সাথে লাগার কোনো সুযোগ নেই।
রাসেলের মরদেহে আঘাতের চিহ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, পানির নিচে কী ঘটেছে সেটা আল্লাহ ভালো জানেন আর যার সাথে ঘটছে সে বলতে পারবে। স্পিডবোটের পাখার আঘাত নাকি ট্রালারের পাখার আঘাত এ বিষয়ে আমি কনফার্ম কিছু বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ কিনতে যান রাসেল খান। এ সময় মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশের একটি স্পিডবোর্ড অভিযান চালালে রাসেল খান নদীতে পড়ে যান। তিনদিন ধরে খোঁজাখুঁজি করার পর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরওয়াডেল এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর বাতিঘর পয়েন্ট থেকে তার স্বজনরা মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের গলায় , মাথায়, বুকে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।