সকাল ১০:৫৪, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জে নিজের দোকানে গ্রাহকদের রক্ষিত স্বর্ণ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে ‘ডাকাতির নাটক’ সাজানোর অভিযোগে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও একজন পলাতক রয়েছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৯ ভরি ৭ আনা স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—দোকানের মালিক শুভ দাস (৩৫), তার সহযোগী আমানত হোসেন রানা (২৭), সোহান মিয়া (২১), মো. শরীফ খান (২২) ও মো. সবুজ মিয়া (২৭)।
এর আগে, গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টায় মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলী এলাকার শাইলীপাড়া ও শিবালয় থানার মহাদেবপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার স্বর্ণাকারপট্টিতে ‘অভি অলংকার’ নামে একটি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যায়। দোকানের মালিক শুভ দাস দাবি করেছিলেন, দুই অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত তার গলায় ছুরি ধরে লকারে থাকা ২০ থেকে ২২ ভরি স্বর্ণালংকার (মূল্য প্রায় ৩৬ লাখ টাকা) লুট করে নিয়ে গেছে। এ সময় বাধা দিতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে আহত করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুনের নির্দেশনায় সদর থানা-পুলিশের একটি চৌকস দল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, দোকান মালিক শুভ দাস নিজেই গ্রাহকদের স্বর্ণ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে এই ডাকাতির নাটক সাজান। তিনি তার পরিচিত মোটরসাইকেল মেকানিক আমানত হোসেন রানার সঙ্গে ৫ লাখ টাকায় এই নাটক সাজানোর মৌখিক চুক্তি করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর রানা তার সহযোগী শরীফ খান ও অন্য একজনকে এনে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হোটেলে রাখেন। তাদের থাকা-খাওয়ার খরচও বহন করেন শুভ দাস। দুর্গাপূজা শেষে ৫ অক্টোবর দিবাগত রাতেই তারা অভিনয় করা ‘ডাকাতির ঘটনা’টি বাস্তবায়ন করেন। দোকানের লকারে থাকা ভুয়া স্বর্ণ লুট এবং শুভ দাসের পিঠে ছুরিকাঘাত—সবই ছিল পূর্বপরিকল্পিত নাটকের অংশ। ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, একটি চাকু, আসামিদের পরিধেয় পোশাক ও লুণ্ঠনের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন স্টিলের বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া, মোট ৩৯ ভরি ৭ আনা স্বর্ণও জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, ব্যবসায়ী শুভ দাস নিজেই তার কাছে রক্ষিত গ্রাহকদের স্বর্ণ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে এই সাজানো ডাকাতির নাটক করেন। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় আরও একজন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।