শেরপুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা

শেরপুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরে হঠাৎ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কিছু লোক সুস্থ হলেও অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি হয়েছেন ১১০ জন ডায়রিয়ার রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে এক সপ্তাহে অন্তত সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও ডাক্তারদের। এদিকে, ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।

ডা. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮টি সিট থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে শেরপুর পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কিছু লোক সুস্থ হলেও অনেককেই আসতে হচ্ছে হাসপাতালে। এক সপ্তাহে প্রায় সহস্রাধিক ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে সেবা নিয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে আশঙ্কাজনকভাবে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো জায়গা খালি নেই। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের হাসপাতালের মেঝেতে ও চলাচলের রাস্তা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সিঁড়ির নিচে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
মুন্সিরচরের মো. জব্বার জানান, তার স্ত্রী ও ছেলে গত ছয় দিন ধরে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। তাদেরকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।

সজবরখিলার বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন জানান, শহরে ডায়রিয়া ছড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমার পরিবারের ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ৩ দিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে এখন নিয়ন্ত্রণে।

শহরের দিগারপাড়ের শামছুন্নাহার বলেন, প্রথমে ২-৩বার টয়লেটে যাই। এরপর অনর্গল পাতলা পায়খানা হতে থাকে। পরে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি। স্যালাইন চলছে।

রোগীর স্বজন ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে। জায়গা নাই। তাই মেঝেতে রাখছি, এখন পর্যন্ত রোগী সিটে তুলতে পারিনি। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিয়েছিল। এখন আবার কিনতে বলছে। তাই দুইয়া স্যালাইন কিনে নিয়ে আসলাম।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডাক্তার শ্যামলী বলেন, ২ নভেম্বর বুধবার থেকে ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত ১১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ২-৩ মাসে যে ওষুধ লাগতো, এখন একদিনেই তা লাগছে। স্যালাইনসহ ওষুধ সংকট রয়েছে। তাই হাসপাতালের বাইরে থেকে স্যালাইন ও ওষুধ ক্রয় করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিনে অন্তত ৫-৬ গুণ রোগী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা, জেলা ও ময়মনসিংহ থেকে ওষুধ এবং স্যালাইন নিয়ে এসে সংকট সামাল দিচ্ছি। জনগণের অসচেতনতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তন ও খাবারের কারণে এমন হতে পারে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, যেসব এলাকায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেসব এলাকায় মেডিক্যাল টিম নিয়ে পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছি। আশা করি খুব দ্রুত ডায়রিয়া শেরপুরে নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর মেডিসিনের যে সংকট ছিলো, তার জন্য অন্যান্য উপজেলা থেকে মেডিসিন আনা হয়েছে। রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়ানো প্রয়োজন। তবে রোগীকে কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়ানো যাবেন না।

More News...

বিড়ি শিল্পের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ