নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ক্ষেতের কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধান চাষিরা। এক দিকে বোরো ধান ও পাটের দাম না পেয়ে অনেক কৃষক লোকসান গুণছেন। সেই লোকসান মাথায় নিয়ে আমন চাষাবাদে নেমেছেন তারা। কিন্তু আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। আমনের মাঝা-মাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার পদুমহার গ্রামের এমাজউদ্দীন , মোগরপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের , মহারাজপুর গ্রামের আলামিন, পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম , বাজিতপুর গ্রামের রাজন মিয়া, রত্না ডিঘির গ্রামের মতিন মিয়া, টুপিরহাট গ্রামের মাফুজসহ বেশ কিছু কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে ধান রোপণের কিছুটা সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষের দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। এ দিকে সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ। সেইসাথে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন কৃষকের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ বরাবর ঈঁদুর কেটে দেয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা ক্ষেতে বিষমাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
তবে কোন কীটনাশক প্রয়োগ করে ইঁদুরের উপদ্রব্য কমাতে না পেরে ক্ষেতের ফসল রক্ষাতে সনাতন পদ্ধতিতে বাড়ীতে বসে বাঁশের তৈরী ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরী করে ফসল রক্ষার আপ্রান চেষ্টা করছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়,আমনধান ক্ষেতে কয়েক ভাগে ৫/৬ ফিট করে যায়গায় ধান গাছের গুড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে । শুকনো ফসলের মাঠের চেয়ে পানি জমানো ফসলের ক্ষেতে বেশি কাটছে। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো হয়েছে বাঁশের তৈরী ইঁদুর মারার ফাঁদ।
কথা হয় সিরাজুল ইসলাম নামে এক কৃষকের সাথে তিনি জানান,চলতি মৌসুমের শুরুতে শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে মাত্র ৪ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন তিনি। ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যাচ্ছে। কিন্তু এই বছর ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তার ৩.৫ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর।তাই নিরুপায় হয়ে বাড়ীতে নিজে বাঁশ দিয়ে ফাঁদ তৈরী করে ক্ষেতে বসে রেখেছি। কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে ১বিঘা জমিতে ফাঁদে এ পর্যন্ত আটকা পড়েছে ১৮টি ইঁদুর। বাঁশের ফাঁদ বসিয়ে প্রতিরাতে ২/৩ টা করে ইঁদুর মারছি। তবুও ইঁদুরের অত্যাচার কোন ভাবেই কমছে না।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান,উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে ইঁদুর নিধন প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশীয় পদ্ধতিতে ইঁদুর মারার ফাঁদ,গর্তে পানি ভরিয়ে ইঁদুর তাড়ানো চেষ্টা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। আগামী দুই একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের উপস্থিতিতে ইঁদুর নিধন প্রচারনা অভিযান শুরু করা হবে।৷