রাত ৯:০৫, ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত স্থির হতে পারছে না: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা (ভারত) প্রতিনিয়ত অপপ্রচার, মিথ্যাচার চালিয়ে ও অপতথ্য দিয়ে কলঙ্ক লেপন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এটা করছে না। অত্যন্ত অস্থির হয়ে গেছে শেখ হাসিনার জন্য তারা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে বনশ্রীতে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘লেডি ফেরাউন’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, ওই নরপিশাচ নারীকে কার সঙ্গে তুলনা করবে? আমরা ফেরাউনের কথা বলি, নমরুদের কথা বলি। এই নরপিশাচ নমরুদ-ফেরাউনের আত্মা নিয়ে লেডি ফেরাউন হয়ে নিজ দেশের শিশু সন্তানদের রক্ত পান করতে দ্বিধা করেননি। আজকে এই দুরাচারী নারী শেখ হাসিনার জন্য কেউ কেউ মায়াকান্না করছে,কেউ কুমিরের কান্না করছে এবং যে দেশে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন সেই দেশ যেন কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না।

এদেশের তরুণ ছাত্র-জনতার আত্মদানের ঢেউ গোটা বিশ্ব জনতাকে এক ধরনের চমক দিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ভারত অপতথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, কোথায় অত্যাচার হচ্ছে? অত্যাচার তো করছেন আপনারা। দিল্লিতে জুমার নামাজ আদায়ের সময় পুলিশ দিয়ে মুসল্লিদেরকে আঘাত করা হয়েছে। তাদেরকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

ভারতেই সংখ্যালঘু নিপীড়ন হয় অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ৪০০ বছরে সম্রাট বাবর যে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন সেই মসজিদকে ভেঙেচুরে তারা সেখানে মন্দির নির্মাণ করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর যত অত্যাচার, অবিচার, অনাচার ওটা তো হয় ভারতেই, বাংলাদেশে হয় না। বাংলাদেশের হিন্দু ,মুসলমান, খ্রিস্টান হাতে হাত ধরে ঘোরাফেরা করে। আমরা তো সবাই মিলে একই হাটে যাই, একই হাটে বাজার করি। এই ঐতিহ্য আমাদের পুরোনো। অথচ আমাদের সেই মহান ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার জন্য ভারত থেকে বারবার আমাদের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যখন তারা দেখল এটা করেও লাভ হচ্ছে না, এখন তারা কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া যে আপনারা দিচ্ছেন, বাংলাদেশের বিজিবির সঙ্গে কি আলোচনা করেছেন? কোথায় কীভাবে দিবেন?

ভারত যা দেখে বা যা করে, সেটা তারা তাদের আধিপত্যবাদী চিন্তা-চেতনা থেকেই করে বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা। তার মতে, আয়তন বড় দেশ ও বেশি জনসংখ্যার গৌরব মাথায় রেখেই কাজ করে তারা। ভারতের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম, বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনা, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার অঙ্গীকার এইটা অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতে আপনাদের কত অস্ত্র আছে, সেনাবাহিনী কত বড়, ওইটা দিয়ে আপনারা মাপলে পারবেন না। আপনারা এত অস্থির কেন? আপনারা বাংলাদেশের বিষয়ে কেন যেন এলোমেলো কথা বলছেন। কারণ আপনারা কোনোভাবেই শেখ হাসিনার পতন কামনা করেননি।

শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থ দেখত উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ সে দেখত না। কারণ শেখ হাসিনা জানতো অবাধ ,সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে তিনি কোনোদিনও জিততে পারবেন না। সেই কারণে শেখ হাসিনা সব সময় দিল্লির একটা শেল্টার চেয়েছে। শেখ হাসিনা নিজেই তো বলেছিলেন, ভারতকে আমি যা দিয়েছি, ভারত সারাজীবন মনে রাখবে। এই কারণেই আজকে ভারতের নীতি-নির্ধারকসহ কিছু রাজনৈতিক দল অত্যন্ত অস্থির হয়ে গেছে শেখ হাসিনার জন্য।

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, অবিলম্বে রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্ষমতা নিয়ে আসতে হবে। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন যেটি আটকে দেওয়া হয়েছিল, শেখ হাসিনা দিনের ভোট রাত্রে করেছেন, মিডনাইট নির্বাচন করেছেন, ভোটারশূন্য নির্বাচন করেছেন, সেটির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সামনের দিনে যা কিছু করার দরকার সেইটা আপনাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে করতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক আশরাফ উদ্দীন বকুল প্রমুখ।