রাত ২:৫৯, ২০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে ১০ কারণে পৃথিবীতে ব্যর্থ মানুষদের খুব দরকার

আক্তারুজ্জামান : একজন জ্যাক মা, আজ সারা বিশ্বের সবার কাছে অতি পরিচিত। তার এই পরিচিত এসেছে তার বিরাট সাফল্যের পর। কিন্তু তার পথ ছিল ব্যর্থতায় ভরা। যতদিন তিনি ব্যর্থ ছিলেন ততদিন কেউ তাকে চিনতো না।

এরকম জ্যাক মা, ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, জাকারবার্গসহ সাফল্যের চূড়ায় বসে থাকা মানুষের সংখ্যা কম না। পৃথিবীতে তারাই জগৎজোড়া পরিচিত পেয়েছেন, যারা আছেন সাফল্যের শীর্ষচূড়ায়।

কিন্তু পৃথিবীতে শুধু সফল মানুষ থাকলেই চলবে না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চলতে গেলে দরকার লাগে অনেক হতাশাগ্রস্থ মানুষ। অনেক স্বপ্ন হারানো যাযাবর। পথ হারিয়ে ফেলা পথিক, আশাহত বিপ্লবী কিংবা বিষাদগ্রস্ত প্রেমিক। সবই দরকার এ ধরণীর।

ব্যর্থদের নিয়ে কোনো সিনেমা হয় না। হয় না কোনো উপন্যাসও। বারবার পড়ে যেয়ে যারা উঠতে পারে তাদেরকে সবাই তুলে ধরতে চায় সামনের সারিতে। কিন্তু ব্যর্থদেরকেও তো মাঝে মাঝে টেনে আনা দরকার।

আমি নিজে কয়েকটি কারণ খুঁজে বের করেছি ব্যর্থদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

প্রথমত, পুঁজিবাদ সমাজে বিত্তশালীদের অন্যতম প্রয়োজন হলো নিরাশ হয়ে পড়া ছেলেটিকে। যাকে অল্প মজুরি দিয়ে বিশাল আকারের কাজ করিয়ে নেয়া যায়। আর মাঝেমাঝে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাকে কেউ যখন সুযোগ দেয়নি, তখন আমিই তোমার পাশে ছিলাম।

দ্বিতীয়ত, হতাশাগ্রস্থ থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যানার লাগিয়ে যে ডাক্তারগুলো চেম্বার খুলে বসে আছেন, তাদের অন্যতম ভোক্তা হলো হতাশাগ্রস্থ মানুষগুলো।

তৃতীয়ত, সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্যের ক্ষেত্রে ব্যর্থ মানুষগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কেননা সফলদের নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা শুধু ব্যর্থদের কাছেই আবেদন যোগায়।

চতুর্থত, মাদক বা তামাকজাত পণ্যের অন্যতম ক্রেতা এই বিষাদগ্রস্ত মানুষগুলো। যারা নিজেদের ব্যর্থ সময়টাকে ভুলে থাকতে বেছে নেয় মরণঘাতী এ পথ, তারাই তো ঐ সব নেশাজাত দ্রব্যের মূল ভোক্তা।

পঞ্চমত, দূষিত রাজনীতিকে আরো দূষিত করার অন্যতম হাতিয়ার ব্যর্থ মানুষ। যাদেরকে ব্যবহার করেন সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

ষষ্ঠত, নিচু শ্রেণির পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে আশাহত মানুষটার কোনো বিকল্প নেই। এই আধুনিক সমাজকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কিছু কর্মী থাকা দরকার। যারা আসে ঐ ব্যর্থতার পথ ধরে।

সাত নম্বরে এসে বলতে পারি জ্যোতিষী শাস্ত্রের আয়ের কথা। স্বপ্ন হারানো মানুষটা যখন কোনো কূল পাচ্ছে না, তখন তাকে আলোর দিশা দেয়ার কৌশল (!) কাজে লাগিয়ে কিছুটা বাড়তি আয় করেন বিভিন্ন জ্যোতিষগণ।

ইন্টারনেটের যুগে সংবাদের কাটতি বাড়ানোও বিরাট একটা সফলতা। এই সাফল্যের ক্ষেত্রেও ভোক্তা শ্রেণি সেই ব্যর্থ মানুষটা।

সঙ্গীত বা সাহিত্য যেখানেই যান, ব্যর্থ মানুষদের মনোঃকষ্ট নিয়ে রচনার সংখ্যা কম নয়। আর প্রিয়জন হারানো মানুষটা নিজের বিষাদ ভুলতে বারবার ঢু মারছে ওই করুণ সঙ্গীতটাতে কিংবা কোনো সাহিত্যের প্রিয় চরিত্রটাতে।

সবশেষে আছে সফল মানুষদের টিকিয়ে রাখতে দরকার ব্যর্থদের। কেননা প্রতিটা সফল মানুষ টিকে আছে তাদের ব্যবসাকে ঘিরে। আর বিশ্বজুড়ে প্রতিটা সফল মানুষের ভোক্তাই হলো ব্যর্থ।

যারা গোসলের সময় কাঁদে, টানা কয়েক রাত জেগে থাকে, অন্যের প্রয়োজনে বিনা দ্বিধায় নিজেকে ফ্রিতেই বিলিয়ে দেয় তারাই ব্যর্থ বলে স্বীকৃত। এরাই ধরে রেখেছে পৃথিবীর সৌন্দর্য।