সন্ধ্যা ৬:৩২, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্তান আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত
সন্তান আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। দুনিয়ার জীবনে সন্তান যেমন চোখের শীতলতা ও দুর্বলতায়, বার্ধক্যে ভরসা হয়, সন্তানকে নেক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সে দুনিয়া ও আখেরাতে সওয়াবের কারণ হয়। মৃত্যুর পরও নেক সন্তানের কারণে মানুষের সওয়াব জারি থাকে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; ১. সদকায়ে জারিয়া (ফায়েদা অব্যাহত থাকে এ রকম সদকা যেমন মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) ২. ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। (সহিহ মুসলিম)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে বলবে আমার এত মর্যাদার অধিকারী কীভাবে হলাম? তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের দোয়া ও ইস্তেগফারের কারণে তুমি এত মর্যাদা পেয়েছ। (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)
তাই যখন কারো সন্তানের জন্ম হয়, তার উচিত খুশি হওয়া এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সিজদায় লুটিয়ে পড়া। নবিজি (সা.)-কোনো খুশির সংবাদ পেলে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। (সুনানে আবু দাউদ)
ছেলে মেয়ে যাই হোক বাবা-মায়ের উচিত তার জন্মে খুুশি হওয়া এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। অনেক সময় বাবা-মা আশা করে থাকেন ছেলে হবে এবং মেয়ে হলে হতাশ হন, এটা সমীচীন নয়।
মেয়ে হওয়ার কারণে মায়ের নিন্দা করা, তাকে দোষারোপ করা মূর্খতা এবং অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এগুলো ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের কাফেরদের বৈশিষ্ট ছিলো। কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের এই স্বভাবের নিন্দা করে বলেছেন,
وَ اِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمۡ بِالۡاُنۡثٰی ظَلَّ وَجۡهُهٗ مُسۡوَدًّا وَّ هُوَ کَظِیۡمٌ یَتَوَارٰی مِنَ الۡقَوۡمِ مِنۡ سُوۡٓءِ مَا بُشِّرَ بِهٖ اَیُمۡسِکُهٗ عَلٰی هُوۡنٍ اَمۡ یَدُسُّهٗ فِی التُّرَابِ اَلَا سَآءَ مَا یَحۡکُمُوۡنَ
যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওম থেকে আত্মগোপন করে। ভাবে আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ! (সুরা নাহল: ৬৮, ৬৯)
মানুষ জানে না কোথায় তার জন্য কল্যাণ রয়েছে। হতে পারে সে মেয়ে যাচ্ছে, অথচ ছেলেই তার জন্য বেশি কল্যাণকর, অথবা ছেলে চাচ্ছে, কিন্তু মেয়ে তার জন্য বেশি কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاِنۡ کَرِهۡتُمُوۡهُنَّ فَعَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَهُوۡا شَیۡئًا وَّ یَجۡعَلَ اللّٰهُ فِیۡهِ خَیۡرًا کَثِیۡرًا
এমনও হতে পারে যে তোমরা যাকে অপছন্দ করছ, তারই মধ্যেই আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন। (সুরা নিসা: ১৯)
আল্লাহ তাআলা অনেককে ছেলে ও মেয়ে দান করেন, কাউকে শুধু ছেলে সন্তান দেন, কাউকে শুধু মেয়ে সন্তান দেন আবার অনেককে কোনো সন্তানই দেন না। এটা আল্লাহর ফয়সালা ও তার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ یَهَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ یَهَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ الذُّكُوۡرَ اَوۡ یُزَوِّجُهُمۡ ذُكۡرَانًا وَّ اِنَاثًا وَ یَجۡعَلُ مَنۡ یَّشَآءُ عَقِیۡمًا اِنَّهٗ عَلِیۡمٌ قَدِیۡرٌ
আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সুরা শুরা: ৪৯-৫০)
অর্থাৎ বিশ্বজগতের সব কিছু এক আল্লাহরই ইচ্ছায়ই পরিচালিত হয়। তিনি যা চান, তা-ই হয় এবং যা চান না, তা হয় না। অন্য কারো এতে হস্তক্ষেপ করার শক্তি ও ক্ষমতা নেই। তিনি যাকে চান পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। কাউকে শুধু ছেলে ও মেয়ে দেন, আবার কাউকে করেন বন্ধ্যা তারা না পায় ছেলে সন্তান আর না পায় মেয়ে সন্তান। মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য ও তফাৎ আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
কোনো নেয়ামত লাভ করার পর আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও শোকর আদায় করলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামতে বরকত দান করেন। নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন। আর নেয়ামতকে গুরুত্ব না দিলে, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে নেয়ামত উঠিয়েও নিতে পারেন।
কোরআনে শোকর আদায় করলে নেয়ামত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন,
لَئِنۡ شَكَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّكُمۡ وَ لَئِنۡ كَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অস্বীকার করো, তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)