রাত ১০:২৬, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
স্বাধীনমত ডেস্ক
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য ফোরামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী/ ছবি: এএফপি/স্পুটনিক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ ভারতের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করবে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেন তিনি।
পুতিন বলেন, আলোচনায় দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারের উদ্দেশ্যে বহু নতুন চুক্তি সই হয়েছে। তেল, গ্যাস, কয়লা- ভারতের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য যা যা প্রয়োজন, রাশিয়া সব কিছুরই নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী। দ্রুত বর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আমরা জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।
২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার তেলের অন্যতম প্রধান বাজারে পরিণত হয়েছে ভারত। তাই পুতিনের এই আশ্বাস কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষা করেই রাশিয়ার সঙ্গে একাধিক চুক্তি করেছে ভারত। তবে দুই দেশের মধ্যে ঠিক কোন কোন বিষয়ে চুক্তি হয়েছে- সেসব বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
দিল্লিতে আলোচনার শুরুতে মোদীর পাশে বসে পুতিন জানান, আজকের দিনটি হবে ‘ফলপ্রসূ’, কারণ প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বিমান ও মহাকাশ- এসব খাতের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও শ্রমের গতিশীলতা।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই সফর ভারতের জন্য কূটনৈতিক ভারসাম্যের বড় পরীক্ষা। কারণ দিল্লি একদিকে রাশিয়ার ঐতিহাসিক মিত্রতা ধরে রাখতে চাইছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চায়, যা তাদের রপ্তানির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি ভারত ‘কমদামে’ প্রচুর পরিমাণে রাশিয়ার তেল কেনাকে উল্লেখ করেছেন। রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে ভারত বর্তমানে চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ শুরুর কথা থাকলেও সেটা এখনো হয়নি। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও ভারতের আলোচনার শেষ ধাপ চলছে, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রধান কূটনৈতিক বিবেচনায় দেখা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রবীণ দোনথি বলেন, এই সফর দেখিয়ে দিচ্ছে যে ভারত পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মধ্যে থেকেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারও হতে চায়, এটাই বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক উত্তেজনার এই সময় পুতিনের ভারতে আসা শুধু প্রতীকী নয়, এটা স্পষ্ট বার্তা যে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে ওয়াশিংটনের চাপ দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। দুই দেশই তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিচ্ছে।