রাত ১১:৩৭, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

সুনামগঞ্জে ২০ কোটি টাকার শসা বিক্রির সম্ভাবনা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ একসময় ছিল সম্পূর্ণ ধাননির্ভর এলাকা। বছরের অধিকাংশ সময় পানি আর বর্ষার ঢেউয়ে ডুবন্ত এই অঞ্চলে সবজি চাষ তেমন ছিল না বললেই চলে। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই ছবি আমূল বদলে গেছে। এখন জেলায় ধানের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে নানা জাতের সবজি, বিশেষ করে শসা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ৩০৭ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩৭২ মেট্রিক টন শসা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, কম সময়ে ফলন, তুলনামূলক কম খরচ এবং বাজারদর ভালো থাকায় শসা এখন জেলার অন্যতম লাভজনক ফসল হিসেবে উঠে আসছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদেরটেক মধ্যপাড়ার কৃষক ইউনুস আলী এ বছর ৩ কেয়ার জমিতে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছেন। স্মার্ট বয়, গ্রীন মাস্টার, গ্রীন স্কেট, গ্রীন বিউটি ও সুরমা–২ জাতের মধ্যে ‘স্মার্ট বয়’ থেকে সবচেয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন। তিনি জানান, প্রতি কেয়ার জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো শসা বিক্রি করা যায়। বর্তমানে তারা প্রতি মণ শসা ১,১৫০ থেকে ১,২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

একই গ্রামের কৃষক নরুল হক বলেন, দীর্ঘদিন শিম চাষ করলেও এ বছর প্রথমবার শসা চাষ করে তিনি দারুণ লাভ পাচ্ছেন। ১ কেয়ার জমি থেকে ইতোমধ্যে তিন দফায় প্রায় ৬০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। মৌসুম শেষে আয় দাঁড়াবে দেড় লাখ টাকার মতো। তবে এক কেয়ার শসা চাষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হওয়ায় ছোট কৃষকদের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ এখনো চ্যালেঞ্জ।

শসা চাষে সম্ভাবনা থাকলেও সংকটও কম নয়। সুলেকাবাদ ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের অভিজ্ঞ শসাচাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘মরক রোগ’ শসা চাষের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই রোগে গাছ আক্রান্ত হলে দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ওষুধ প্রয়োগেও অনেক সময় লাভ হয় না। তার এক বিঘা জমির ফসল এ রোগে নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, শসার পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, মাছি-পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে কৃষকদের নিয়মিত মাঠপর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফেরোমন ফাঁদসহ প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে কীটনাশক ছাড়াই নিরাপদ শসা উৎপাদন সম্ভব হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারদর ও চাহিদা দুটোই ভালো। কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আগামী দিনে সুনামগঞ্জে শসা চাষ আরও বেড়ে যাবে এবং সম্ভাবনাও আরও বিস্তৃত হবে।