সকাল ১০:০২, ২৫শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : নগর জীবনের কংক্রিটের খাঁচায় সবুজ যেন এক স্বপ্নের নাম। আর সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ক্যানসার আক্রান্ত কামরুল এহসান চন্দন। তার বাগান সবুজে ঘেরা জীবনের পাঠশালা হয়ে উঠেছে।
তার বাগানে ওষুধি ও বিদেশি ফল, ফুল, অ্যাভোকাডো, রামবুটান, তিন ফল, পার্সিমন, ননিফল, করোসল, যাবোটিকাবা, আম, লিচু, পেয়ারা, অ্যাডেনিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, ক্যাকটাসসহ সাকুলেন্ট গাছও রয়েছে তার বাগানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানের চারপাশে ছোট-বড় টব, ঝুলন্ত ঝারি, কাঠের ক্রেট, নতুন-পুরাতন ঝারির ভেতর থেকেও উঁকি দিচ্ছে রঙিন ফুল আর অদ্ভুত গাছের ডালপালা। গন্ধে গন্ধে ভরে আছে বাতাস, মধুর খুঁজে উড়ে এসেছে মৌমাছির ঝাঁক। ছোট্ট উদ্ভিদ-জগৎ যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লব, যা কেবল চোখের আরাম নয়, মনকেও ছুঁয়ে যায়। যান্ত্রিক জীবনের মাঝেও এমন বাগান প্রমাণ করে- চাইলেই কংক্রিটের শহরের বুকে গড়ে তোলা যায় এক টুকরো প্রকৃতি।
স্থানীয়রা জানান, বাগানে ছোট ছোট চারা সাজিয়ে রাখা হয়েছে থরে থরে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অপরিচিত চারা থাকায় মানুষ এসে এসব গাছ সম্পর্কে জানতে পারছে। বাগানে এসে কারও ছেলে-মেয়ে ফুল দেখে ছবি আঁকে, কেউবা আসে চারা নিতে। যারা মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতায় ভোগেন, তাদের অনেকে গাছের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে এখানে আসেন। এরকম বাগান বেশি বেশি গড়ে ওঠা দরকার।
তোফাজ্জল হোসেন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শিল্পাঞ্চল খ্যাত এ উপজেলাজুড়ে যেখানে গাছ কাটা মানেই উন্নয়ন, সেখানে কিছু মানুষ এখনও গাছ লাগিয়ে প্রমাণ করছেন- উন্নয়ন আর প্রকৃতি পাশাপাশি বাঁচতে পারে। এমন বাগান দেখে সত্যিই চোখ ফেরানো দায়।
কামরুল এহসান চন্দন কলেজে শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি এ বাগান গড়ে তুলেছেন। ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগাতে পছন্দ করতেন তিনি। বড় হয়ে একটি বাগান করার শখ ছিল তার। ২০২০ সালে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এ অবস্থায় সুস্থ হতে ওষুধের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এদিকে ছোটবেলা থেকে বাগান করার শখ থাকায় ১০ শতাংশের মূল্যবান জমিতে গড়ে তুলেন শখের বাগান। বর্তমানে বাগানে দেশি-বিদেশি চার শতাধিক ফল ও ফুলের গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ওষুধি গাছসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক গাছের চারা।
কামরুল এহসান চন্দনের স্ত্রী সাবিহা সুলতানা লাকি বলেন, বাগান তৈরির এ কাজকে প্রথমে আমার ভালো লাগেনি। তবে এখন ভালো লাগে। বাগান পরিচর্যায় স্বামীকে সহযোগিতা করি। বাগানের পশাপাশি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষও করা হচ্ছে। এছাড়া কবুতর, দেশি মুরগিসহ নানা জাতের শাকসবজিও মনোযোগ দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। বাগানের চারায় প্রতিদিন একটা করে নতুন পাতা গজানো দেখা, একটা ফুল ফোটা- এ এক অন্য রকম আনন্দ। আমার কাছে মনে হয়, বাগানের গোটা জায়গাজুড়ে এ যেনো এক অনন্য উদ্ভিদ-ভুবন।
কথা হয় কামরুল এহসান চন্দনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি চেয়েছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সচেতন জীবনের মিশ্রণ ঘটাতে। বাড়ির আঙিনায় বাগান করে দারুণ সময় উপভোগ করছি। যতদিন বেচে আছি, বাগানটি পরিচালনা করবো।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে ভালুকায় শিল্পায়ন হচ্ছে মন্তব্য করে ভালুকা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি পরিবেশবীদ মতিউর রহমান জগলু বলেন, প্রকৃতি রক্ষায় চন্দনের এ উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ জোগাবে। নিঃসন্দেহে কামরুল এহসান চন্দন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, কামরুল এহসান চন্দন নিজের প্রচেষ্টায় এই বাগান গড়ে তুলেছেন। তার দেখাদেখি আরও অনেকে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কামরুল এহসান চন্দনকে পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।