সন্ধ্যা ৬:৩২, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশ্বিক পানি ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা, স্থায়িত্ব ও ন্যায়বিচার রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে সদস্যপদ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বাড়াবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের অধীনে ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘মনিটরিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট’ বিষয়ক ষষ্ঠ যৌথ সভার প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
নব-অধিভুক্ত সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য নদী শুধু নদী নয়– নদীই আমাদের প্রাণ।’
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদীবাহিত বদ্বীপ– গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা-মেঘনা অববাহিকার মিলনে গঠিত। দেশের মোট পৃষ্ঠজলের ৯০ শতাংশের বেশি আসে সীমান্তের বাইরে থেকে। নিম্ন গতিপ্রবাহী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ন্যায্য ও যুক্তিসংগত ব্যবহার, অংশগ্রহণ এবং ‘কোনো ক্ষতি না করার’ নীতির পক্ষে কথা বলছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও যৌথ নদী কমিশন গঠনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতা এখনো নীতিগত প্রধান লক্ষ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়– যেখানে দেশের সব নদীকে জীবন্ত সত্তা বা আইনগত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বিশ্বে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের এক অনন্য উদাহরণ।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ নদী রক্ষায় বিস্তৃত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে, তবে বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এজন্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং শিল্প ও গৃহস্থালি দূষণ, লবণাক্ততা ও প্রবাহ হ্রাস মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সরকার দেশজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিরূপণ করছে এবং ইতোমধ্যে দুটি অঞ্চলকে ‘পানি সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ চলছে, যাতে নিরাপদ পানীয় জলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী ও আন্তর্জাতিক হ্রদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কনভেনশনের ২০তম পক্ষসভায় বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এ কনভেনশনে যোগ দিয়েছে।
বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করেছে, এই কনভেনশন দেশের জনগণের জন্য ‘পানি নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং এর সদস্যপদ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে টেকসই জল ব্যবস্থাপনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা উৎসাহিত করবে।