গরম উপেক্ষা করে কক্সবাজারে বিপুল পর্যটক সমাগম

গরম উপেক্ষা করে কক্সবাজারে বিপুল পর্যটক সমাগম

নিজস্ব প্রতিবেদক
এবারের ঈদুল ফিতরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নববর্ষ এবং সপ্তাহিক ছুটি। ফলে টানা পাঁচদিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। টানা বন্ধে চাকরিজীবীদের মাঝে খুশির আমেজ বিরাজ করলেও কিছুটা হতাশ কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, পাঁচদিনের ছুটির প্রথম দু’দিন অর্থাৎ ঈদ ও ঈদের আগের দিন এক প্রকার পর্যটক শূন্যই ছিল কক্সবাজার। সপ্তাহিক ছুটিতে আগে থেকেই শুক্রবার ও শনিবার বুকিং থাকতো বেশ।

তবে সেই হতাশা কাটছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। গরম উপেক্ষা করে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। শনিবারও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

অতীতে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম সচল থাকতো। তখনো পর্যটকে ভরে থাকতো কক্সবাজার। তবে এবারের বৈশাখ, চৈত্রের খরতাপে প্রকৃতিকে জ্বালিয়ে ছারখার করছে।

এপ্রিলের রুদ্রমূর্তি ধারণ করা সময়ে শুরু হওয়া পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণে পূর্বের ধারায় এবারও তিনদিনের বৈশাখী মেলার আয়োজন করছে পর্যটন জোনের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। পার্কিং এলাকায় নাগরদোলা, লবিতে বৈশাখ ঐতিহ্যের মেলার নানান স্টল বসছে। বৈশাখী সাজে সাজানো হয়েছে হোটেলে পার্কিং এলাকাসহ চারপাশ। বিনোদনে থাকছে জলের গান শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনও।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারের রমজানের মাঝামাঝি সময় হতেই তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। ফলে অন্য সময়ের রমজানের চেয়ে পর্যটক শূন্যতায় ছিল কক্সবাজার। আর ঈদের প্রথম দিনেও তেমন কোনো জনসমাগম ছিল না বলা যায়। ফলে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা ছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটন এলাকায় জনসমাগম বেড়েছে। গরম উপেক্ষা করেই বেলাভূমি লোকারণ্য হয়ে আছে। এ ধারা আরও দু’দিন থাকবে বলে আশা করছি।’

ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন ফাহিম রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসেন, তাই কোথাও বেড়ানো হয় না। কর্মস্থল থেকে ছুটি পাওয়াও কষ্টসাধ্য। তাই দাবদাহ জেনেও দুই দিনের জন্য শুক্রবার পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। প্রচণ্ড রোদ, তবে ঢেউয়ের সান্নিধ্য পেয়ে সেভাবে অনুভূত হচ্ছে না। বাচ্চা ও পরিবার খুবই উৎফুল্ল মনে সবকিছু উপভোগ করছে।’

কলাতলীর সী-নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলে টানা বন্ধে গ্রুপ এবং ইন্ডিভিজ্যুয়াল বুকিং হতো গেস্ট হাউজগুলোতে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এবার মাত্র দুদিন চাপ থাকবে। শুক্র-শনিবার লাখো পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করবেন বলে আশা করা যায়।’

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘রমাজানের পর পর্যটক বরণে নগরীর আবাসান ও খাবারের ঘরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। প্রস্তুতি নেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-হকাররাও। মাস দেড়েক ধরে সুনসান নীরবতায় থাকা সৈকত জুড়ে কোলাহলমুখর পরিবেশের আশায় সবার পূর্ব প্রস্তুতি ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু পূর্বের সেই আশা পূরণ না হলেও শুক্রবার উল্লেখ করার মতো পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে প্রায় দেড় লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রোজা শেষ হওয়ার আগে ১২-১৩ এপ্রিলের জন্য ৮০-৯০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছিল। টানা বন্ধ হলেও এ দু’দিন একটু বেশি চাপ থাকবে বলে আশা করছি। তবে পহেলা বৈশাখেও পর্যটক উপস্থিতি মোটামুটি থাকবে বলে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে এ তিনদিন কয়েক লাখ পর্যটক আসতে পারে।’

সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরো রমজান মাস কক্সবাজার পর্যটকশূন্য থাকায় গত মাস-দেড়েক কর্মচারীদের বেতনও জোগার করতে পারিনি। ঈদের ছুটিতে পর্যটক আগমন বাড়লে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি।’

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘পর্যটন সেবায় আমাদের যাত্রার পর থেকেই ইংরেজি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বর্ণিল আয়োজন করে থাকি। করোনা ও রোজার মাঝে পড়ায় গত কয়েক বছর বাংলা নববর্ষ বরণে অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার পুরোনো ঐতিহ্য ধরে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ থেকে তিনদিনের মেলার আয়োজন করছি আমরা। বাঙালিয়ানা ষোলআনা পূর্ণ করতে জলের গান ব্যান্ডদলসহ নানান আয়োজন থাকছে মেলায়।’

পর্যটন উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের সেবায় হোটেল-মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকারেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।’

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবায় সৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি আমরা। বিপদাপন্ন কোনো পর্যটক একটি বাটন টিপেই সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘ঈদে টানা ছুটি পড়েছে, গরমও পড়ছে বেশি। এরপরও পর্যটক সমাগম আগের মতো বেশি হবে, সেটা রোজা শেষ হওয়ার আগেই ধারণা করেছিলাম। শুক্রবার সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। রোজার মধ্যেই পর্যটক সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করেছি, যেন পর্যটকেরা ভালো সেবা পান। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। আরও কয়েকদিন বালুচর ও কক্সবাজার লোকারণ্য থাকবে, সেই আশা সবার।’

 

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?