গাজীপুরে বিদ্যালয়ে’র প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

গাজীপুরে বিদ্যালয়ে’র প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড ছোট দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ, আর্থিক অনিয়ম, স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, একক স্বেচ্ছাচারিতা ও রেজিষ্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত ফি’র চাইতে অধিক ফি আদায় এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মতো দূর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, স্কুল ফান্ডের টাকা নিয়ে নয় ছয়, ফরম ফিলাপে শিক্ষাবোর্ডের নামে ঘুষ আদায়, বোর্ডের নিয়ম না মেনে ৩হাজার টাকার বিনিময়ে অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট বিক্রি। শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ বিদ্যালয়ের নিজস্ব কম্পিটারের মাধ্যমে করার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক স্কুলের বাহির থেকে রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ করে থাকেন। যাতে বেশি ভাউচার করা যায় এবং অন্যান্য শিক্ষকরা এবিষয়ে কোন তথ্য না জানেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিক এই বিদ্যালয়কে বানিয়েছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া। তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লুটপাট করছেন। প্রশংশা পত্র বিতরন, প্রত্যয়নপত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। এমনকি রেজিস্ট্রেশন বাবদ ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে ঘুষ দিতে হয় উল্লেখ করে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বাহিরের ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম ফিলাপ সরকারি ফি-২০০০ এর স্থলে রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত ক্রস ফি নাম করে তিনি আদায় করেছেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বোর্ডের নিয়ম কোন সাবজেক্টে নির্বাচনী পরিক্ষা অকৃতকার্য হলে এসএসসি পরিক্ষায় কোন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে না। অথচ প্রধান শিক্ষক সকল বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থী এমনকি নির্বাচনী পরিক্ষায় অংগ্রহন করেনি এমন ছাত্র-ছাত্রীদেরও টাকার বিনিমিয়ে ফরম ফিলাপ করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী নিয়োগের পায়তারা করে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণ, সরকারি সম্পদের অপচয় ও বিনষ্ট করে প্রায় ১২ বছর যাবৎ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তার কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এসএসসি ফরম পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, স্কুলের ছাত্রব্যতিত বাহিরের কোচিং সেন্টারের ছাত্রদের টাকার বিনিময়ে রেজিষ্ট্রেশন করণ রেজিষ্ট্রেশন ফি সরকারি ভাবে ৭৫টাকা বিধান থাকলেও রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত ৫’শত টাকা ফি আদায় এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পদ থেকে আয়ের অর্থ একাই আত্মসাৎ করাসহ অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে। আবু বকর ছিদ্দিক দীর্ঘ ১২ বছর যাবত ছোট দেওড়া অগ্রনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের সকল প্রকার আয় স্কুল ফান্ডে জমা দেওয়া। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটি টাকাও স্কুল ফান্ডে জমা দেননি। পুরো টাকাই তিনি আত্মসাৎ করেছেন যার ফলে শিক্ষকদের স্কুল অংশের বেতন ১৮ মাসের বকেয়া পড়ে যায়। ২০২০-২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সেশন ফি বাৎসরিক বেতন নেওয়ার পরেও কোন টাকা স্কুল ফান্ডে জাম দেননি অথচ স্কুল রেজুলেশনে প্রধান শিক্ষক লিখেন স্কুল বন্ধ থাকায় একটি টাকাও উঠেনি।
প্রধান শিক্ষক অবু বকর ছিদ্দিকের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তার হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না স্কুলে কর্মরত অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল বলেন, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, এগুলা একটাও সত্য না, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যে টাকা গুলা আসছে সবই ব্যাংকে জমা দেওয়া আছে এবং নগদ খরচ হয়েছে। যখন ফুল কমিটি ছিল তখনকার সকল আয়-ব্যায় কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন করা আছে। অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে কোন সাটিফিকেট দেওয়া হয় না। অনেক সময় সার্টিফিকেট আমি এমনিতেও দিয়ে দেই। আবার ছাত্ররাও বলেন স্যার ২০০ টাকা নেন তা ছাড়া আর কোন টাকা নেওয়া হয় না। তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, রেজিষ্ট্রশেন ফি বাবদ যে টাকা নেওয়া হয় তা রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয়না। এগুলো সব বানোয়াট আপনি আসেন, এসে দেখেন। স্কুলের কয়েকজন মাস্টার আমার বিরুদ্ধে অনেক দিন যাবত লড়তেছে। কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো কাছ ঘুষ নেয়নি এগুলো সব মিথ্যা বানোয়াট। এতসব আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ, সরকারি সম্পদের অপচয় ও অবিনষ্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনরূপ তদন্ত বা ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন