একুশে পদকপ্রাপ্তির তৃপ্তি

একুশে পদকপ্রাপ্তির তৃপ্তি

বিনোদন ডেস্ক : সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন মাসুদ আলী খান (অভিনয়), শিমূল ইউসুফ (অভিনয়), গাজী আবদুল হাকিম (সংগীত), জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (আবৃত্তি) ও নওয়াজীশ আলী খান (শিল্পকলা)। এ অর্জনে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন তারা

এমন অর্জনের পেছনে অনেকের শ্রম রয়েছে। আমার মা, বড় ভাই শহীদ আলতাফ মাহমুদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সেলিম আল দীন, আমার মেয়ে এশাÑ প্রত্যেকের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। তাদের কারণে আমি প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে উৎসাহ পেয়েছি। তারা ছাড়া এত দীর্ঘ পথচলা কখনো সম্ভব হতো না। সরকারকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমার শিল্পচর্চাকে সম্মানিত করার জন্য। জীবনে পদকপ্রাপ্তি, নতুন করে পথচলার প্রেরণা জোগায়। একুশে পদক, আমার শিল্পযাত্রায় নিঃসন্দেহে অনন্য প্রাপ্তি।

চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। কাজ করে গেছি। অসংখ্য মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি। এগুলোই আমার সেরা অর্জন। তবে মাঝেমাঝে রাষ্ট্রীয় একটা স্বীকৃতি পাওয়ার ইচ্ছে জাগত। ১৯৭৫ ও ’৭৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভশন থেকে সেরা প্রযোজকের পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু তখন মার্শাল ল’ চলছিল। তাই সেই স্বীকৃতিগুলো গেজেট হয়নি। এ কারণে আক্ষেপ ছিল। একুশে পদক পেয়ে সেই আক্ষেপ মিটেছে বলতে পারেন। আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার সব সময় মনে হয়েছে আমি একজন অ্যাভারেজ মানুষ। কী এত পাওয়ার আছে; যা পাওয়ার সেটা পেয়েছি। যথেষ্ট সম্মান ও সুনাম পেয়েছি। তবে সব সময় আমার ভেতরে একটা অনুচ্চারিত চাওয়া ছিল। যদি কখনো রাষ্ট্রীয় একটা স্বীকৃতি পেতাম! আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আনন্দিত ও গর্বিত।

এমন অর্জন আমার জন্য গর্বের। সত্যি বলতে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ স্ত্রীর কাছে। বহুকাল থেকে আমাকে সহ্য করে আসছেন। দিনের পর দিন শ্যুটিং থেকে অনেক দেরি করে ফিরতাম। সেই বিয়ের পর থেকেই। শ্যুটিং নিয়মিত থাকায় বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হতো। আমার জন্য ভাত গরম করে রাখা, দরজা খুলে দেওয়াÑ কত ত্যাগ করেছেন। তার কাছে বেশি কৃতজ্ঞ। সংবাদটি শোনার পর তার কথা সবার আগে মনে পড়েছে। সংবাদটি যখন জানানো হয় তখন তিনি বাসায় ছিলেন না, ডাক্তারের কাছে ছিলেন। অবশ্যই মা-বাবার কথাও মনে পড়ছে। তারা কখনো গানে বাধা দেননি। আমার ছেলে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে আছে। তাদের কথাও মনে পড়েছে। আমি ভীষণ খুশি এমন অর্জনে। কৃতজ্ঞ সবার কাছে। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সহকর্মীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। আমার নাম জানার পর এক এক করে অনেক সহকর্মী ফোন করেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন, ভালো লাগছে।

সত্যি বলতে, নিজের চেয়েও চার গুণ খুশি হয়েছি বিদ্যানন্দ পাওয়ায়। তারা কিছুদিন আগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নোংরামির শিকার হয়েছিল। শুধু নামটা বিদ্যানন্দ হওয়ার কারণে। তবে তারা তাতে ভ্রƒক্ষেপ করেননি। বরং নীরবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে নয়, শুধু মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যিনি এর উদ্যোক্তা, তিনি যে স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তুলেছেন, এটা অভূতপূর্ব। নিজের কথা বলতে গেলে, আমি এ ধরনের প্রাপ্তিতে নিরাসক্ত। আমি অনেক পরে জেনেছি যে, আমাকে দিয়েছে। যা হোক, বেটার লেট দ্যান নেভার। অন্তত আমার ছেলেমেয়েদের নিতে হয়নি, জীবিত অবস্থায় দিয়েছে, এটাই যথেষ্ট। কোনো মরণোত্তর পুরস্কারে আমার সায় নেই। মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার মধ্যে একটা কৃপা থাকে এবং তাদের একটা অবহেলাও থাকে।

একজন মানুষ আশি-পঁচাশি বছর অবদান রেখে মারা গেছেন, তারপর তাকে সম্মাননা দিলেন। তার মানে এই পঁচাশি বছর পর্যন্ত তাকে চিনলেন না! আমার মনে হয়, এই মরণোত্তর ব্যাপারটা তুলে দেওয়া উচিত। আমরা তাদের জীবিত অবস্থায় কেন স্বীকৃতি দেব না? জীবিত অবস্থায় দিন, যাতে তিনি জেনে যান তাকে রাষ্ট্র মনে রেখেছে। আর যারা আমাকে আবৃওির জন্য এই সম্মাননা দিচ্ছেন, তারা হয়তো আমার অভিনয় দেখেননি, দেখার সুযোগ পাননি। আমি তো লেখালেখি, অভিনয়, আবৃত্তি তিনটাই করি; এখন তারা কি আমাকে তিনটি পদক দেবেন? আমার চাওয়া-পাওয়া খুব কম, নেই বললেই চলে। ওনারা ভালোবেসে দিয়েছেন, আমিও নেব। এটাই।

ছোটবেলা থেকেই গানের সুর আমাকে প্রভাবিত করত। সংগীতের যন্ত্রের প্রতি আমার আলাদা একটি ভালোবাসা কাজ করত। তাই স্কুলজীবন থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে কিছু একটা বাজানোর। তবে বাঁশির প্রতি আমার ভালোবাসা জন্ম হয় আমাদের পাশের গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টারের কাছ থেকে। তিনি গান করতেন, বাঁশি বাজাতেন। সেই ছোটবেলা থেকে ওনার বাসায় সারা দিন থেকে বাঁশি চর্চা করতাম। যেই চর্চা আজ আমাকে একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত করেছে। আমি খুবই গর্বিত এবং কৃতজ্ঞ। যারা আজ আমাকে এখানে পৌঁছতে সহযোগিতা করেছেন।

More News...

বিড়ি শিল্পের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ