মোল্লাহাটের চর উদয়পুর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি; অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি

মোল্লাহাটের চর উদয়পুর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি; অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে বাগেরহাটের মোল্লাহাটের চর উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ রায়ের বিরুদ্ধে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ পরিতোষ রায়ের দুর্নীতির বিষয়ে অবগত থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। এই এলাকায় সরকারি দলের অনেক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ থাকা সত্ত্বেও একের পর এক দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়ায় হতবাক হয়েছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাগণ। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হলে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ঠিকমত উপস্থিত না হওয়া, বিলম্বে ক্লাস করানো, সার্টিফিকেট দিতে গড়িমসি, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে না দেওয়া, বিদ্যালয়ে বাজেটের টাকা আত্মসাৎ, স্বাক্ষর জালিয়াতি সহ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে আসছে তারা। একাধিক পত্র পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক পরিতোষ রায়ের দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও আমলে নেয়নি জেলা কিংবা উপজেলা শিক্ষা অফিস।

এবিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে দেখা মেলেনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ রায়ের মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নাই। বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষকগণ জানান, প্রধান শিক্ষক এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন নাই। তিনি গত ২৯ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে গত ১লা জানুয়ারী বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় ২৯ তারিখেরও উপস্থিতির স্বাক্ষর করেন। ৩০ ডিসেম্বর পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার সময়েও কেন্দ্রে উপস্থিত হন নাই, এমনকি পরীক্ষার্থীদের খোঁজ খবরও নেন নাই তিনি। ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তিনি স্বল্প পরিমান বই এনেছেন। আমরা যতদূর জানি তিনি বাড়িতে আছেন। স্লিপের টাকা আত্মসাৎ, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে না দেওয়া, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিদের সাক্ষর জালিয়াতি সহ অসংখ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করা শুরু করেছে। অপরদিকে বিদ্যালয়ের সভাপতি কখনো এই বিদ্যালয়ে আসেন না। বিদ্যালয়ে কত কি ঘটছে সে বিষয়ে তিনি কখনো খোঁজ নেননি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক জিনিয়া সুলতানা জানান, কোরোনার মধ্যেও উপবৃত্তির টাকা পেয়েছি। তার পরে আর পেলাম না। এই স্যার আসার পর থেকে এই বিদ্যালয়ের দুর্নাম শুরু হয়েছে, সে দুর্নীতি চালু করেছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি এবছর অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেয় নাই। অনেকেই উপবৃত্তির টাকা পাই নাই। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি, সে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। এই হেড স্যারের জন্য অনেকেই এই বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের ভর্তি করে না। সে না যাওয়া পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের উন্নতি হবে না। আমরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়ে অনেক বলেছি। সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও এবিষয়ে জানিয়েছি। কোনো লাভ হলো না। প্রধান শিক্ষকের অনেক ক্ষমতা। সে সবকিছু উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ও ম্যানেজ করেই করে চলে।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি দীন ইসলাম জানান, পরিতোষ রায় একজন দুর্নীতিবাজ ও লোভী শিক্ষক। বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৫২ জন। বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি পায় মোট ৪৭ জন শিক্ষার্থী। এবছর পরীক্ষা দিয়েছে ১১ জন। বাকি ৩৬ জন শিক্ষার্থী কারা? কোথায় তাদের ঠিকানা কোথায়?ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য শিক্ষা অফিসের কোন কর্মকর্তা এবিষয়ে তদন্ত করে না। সে প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যই না। আমি সভাপতি থাকা কালীন এই স্যারের সাথে পারি নাই। সে আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের অবস্থা একদমই ভালোনা। আশেপাশের বাচ্চাদের দূরের স্কুলে ভর্তি করে কিন্তু অভিভাবকরা এই স্কুলে পাঠাচ্ছে না। এই শিক্ষক দুর্নীতিবাজ। স্কুল বাঁচাতে তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। অফিস থেকে কর্মকর্তারা আসে বক্তব্য দিয়ে চলে যায়। অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়না তারা।

এবিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ রায়ের মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নাই। তবে বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে তার স্ত্রী কল রিসিভ করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি অসুস্থ আছেন বলে মোবাইলের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি মোল্লাহাট সরকারি মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক মনি শংকর গোলদার বলেন, প্রধান শিক্ষক পরিতোষ রায় তার ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। বিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে আমি জানি না। তার দুর্নীতির দায় আমি নেব না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ওই শিক্ষক একজন প্রতিবন্ধী, তার বিরুদ্ধে অভিভাবক ও স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিক পরিচয়ে চর উদয়পুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সম্বন্ধে কথা বলতে চাইলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহ আলম।

More News...

বিড়ি শিল্পের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ