নাটোরের দুলুর মেয়ে এখন ব্যারিস্টার

নাটোরের দুলুর মেয়ে এখন ব্যারিস্টার

নিউজ ডেস্ক : ‘রাজনীতিবিদ বাবা একদম ছোটবেলা থেকে বলতেন, মা দেখো তোমাকে ব্যারিস্টার হতে হবে। আমাকে মাঝে মধ্যেই জেলে যেতে হয়। আমি জেলে গেলে তুমি আমার পক্ষে আইনি লড়াই করবে। আমাকে জেল থেকে মুক্ত করবে।‘ –এভাবে ছোটবেলায় বাবা ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন মনে গেঁথে দিয়েছিলেন।’

কথাগুলো সাবেক উপ-মন্ত্রী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে তাসনুভা তাব্বাসুম রাত্রির। তিনি এখন ব্যারিস্টার। ২০১৮ সালে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জুনিয়র হিসেবে আইনপেশা শুরু করেন।

২০২০ সালে জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন। এখন তিনি সুনামধন্য আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল সার্কেলের অ্যাসোসিয়েটস হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। একজন সফল আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। অসহায়-দুস্থ মানুষদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করতে চান রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠা এই ব্যারিস্টার।

জীবনের অজানা নানান বিষয় নিয়ে এই প্রথম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার তাসনুভা তাবাস্সুম রাত্রি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।

dhakapost

পারিবারিক পরিচয়
গ্রামের বাড়ি নাটোরে। জন্ম ঢাকায়। বাবা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। যখন আমি খুব ছোট তখন আমার বাবা এমপি। তারপর বাবা মন্ত্রী হলেন। বড় হয়েছি মন্ত্রী পাড়ায় এমপি হোস্টেলে। বাবা একদম ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত। আমার দাদা ডা. নাসির উদ্দিন তালুকদার সমাজ সেবক ছিলেন। তিনি খুব রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার বাবা-ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। ফ্যামিলির সবাই মোটামুটি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার চাচা, কাজিনও আইনজীবী। চাচা নাটোর বারের প্রেসিডেন্ট। বাবা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মা নিজেও রাজনীতি করেন। মায়ের নাম সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। আমরা দুই বোন। আমিই বড়। ছোট বোন জেরিন সুবাহ রোদেলা। সে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্রাইটেনে আর্টস নিয়ে পড়ছেন। এক বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। স্বামী ব্যবসায়ী। আমেরিকায় পড়াশুনা করে এখন তার বাবার গামের্ন্টস ব্যবসা দেখাশুনা করছেন।

পড়ালেখার সোনালী সময়
স্কুলিং ছিল স্কলাসটিকায়। ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা অনেক ভালোবাসতাম। স্কলাসটিকায় সব সময় ক্লাসে ফাস্ট হতাম। যারা ক্লাসে ফাস্ট হতো তাদের আবার অ্যাওয়ার্ড দিতো। বাবা মা প্রত্যেক বছর যেতেন অ্যাওয়ার্ড নিতে। ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড পাই ’ও’ লেভেলে ভালো রেজাল্টের জন্য। এ লেভেলে ল’ তে স্টার পাই। ল’ তে এ’ লেভেলে স্টার পাওয়া খুবই কঠিন। যখন স্টার পেলাম বাবা তো মহাখুশি। স্কলাসটিকা থেকে এ’ লেভেল শেষ করে ২০১৩ সালে ইংল্যান্ড চলে যাই। এলএলবি চ্যান্স পেলাম ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা সিটি ইউনিভার্সিটিতে। সবাই তো খুশি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এলএলবি পড়া শুরু করি। সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৬ সালে এলএলবি শেষ করি। ব্যারিস্টারি পাসও সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে করেছি। ২০১৮ সালে লিংকন্স ইন থেকে কল টু দ্যা বার কমপ্লিট করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।

কেন আইন পড়লেন?
বাবা ব্যারিস্টারি পড়তে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি নিজেও একজন অ্যাডভোকেট। আমি যখন ক্লাস থ্রি-তে পড়ি তখন ক্লাসে শিক্ষকরা জিজ্ঞেস করতেন তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? আমি তখনই বলেছি— ব্যারিস্টার হতে চাই। তখন কিন্তু বুঝতাম না ব্যারিস্টার কী। অনেকে লিখেছে ডাক্তার হব, অনেকে আবার টিচার-আর্মি অফিসার হবে। কত কিছু লিখেছে। আমি তখনও লিখেছি ব্যারিস্টার হতে চাই। কারণ আমার বাবা একদম ছোটবেলা থেকে মনে ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছিল। তোমাকে ব্যারিস্টার হতে হবে। ইনশাআল্লাহ হতে পেরেছি। আমার ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছাটা পুরোপুরি বাবার থেকে এসেছে। বাবা বলতেন, আমার বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, আমি যদি জেলে যাই আমার মেয়ে আমার পক্ষে আইনি লড়াই করবে।

আমার বাবা এখনও বলে। আমি যখন লইয়ার হিসেবে প্র্যাকটিসিং লাইসেন্স পাই আমার বাবার থেকে বেশি খুশি কেউ হননি। আসলে বাবার স্বপ্নটাই আল্টিমেটলি আমার স্বপ্ন হয়ে গেছে। আমার জীবনের সবচেয়ে স্ট্রংগেজ ওমেন হচ্ছেন আমার ‘মা’। আমার বাবার অনুপস্থিতিতে মা যেভাবে আমাদের সাপোর্ট করেছে, শক্তি যুগিয়েছে, সবকিছু করেছেন।

রাজনীতিবিদদের সন্তানরা কেন বেশি আইন পেশায় আসেন?
আমি মনে করি সব রাজনীতিবিদদের ছেলে যে ব্যারিস্টার বা আইনজীবী হয় এটাও ঠিক না। বলতে গেলে বাবারা একটা সন্তানকে ডক্টর বানাতে চায়, আরেকটা সন্তানকে লইয়ার বানাতে চায়। এটা তো নরমাল। আমার আরেক বোন আর্ট নিয়ে পড়ছে। তবে আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতি করলে তাকে জেলে যেতে হয়। এ কারণে পরিবারে একজন আইনজীবী থাকুক সবাই চান। ওয়ান ইলেভেনের সময় যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম বাবাকে মুক্ত করার জন্য আমার মা বিভিন্ন আইনজীবীর কাছে দৌড়াদৌড়ি করতেন। তখন বাবা বলতেন আমার মেয়ে যদি এখন বড় থাকতো, তাহলে কারও কাছে যেতে হতো না। সন্তান আইনজীবী/ব্যারিস্টার থাকলে রাজনীতিবিদ বাবা-মায়েরা একটা সিকিউরিটি পান।

বর্তমান কাজের ব্যস্ততা নিয়ে বলুন
২০১৮ সালে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফিরে প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে প্র্যাকটিস শুরু করি। সেখানে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের কাছে ড্রাফটিং,নোটিশ সার্ব করা শিখেছি। পিটিশন কীভাবে ড্রাফট করতে হয় ব্যারিস্টার সারা হোসেন আমাকে শিখিয়েছেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে কাজ করেছি। ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করি। এখন জজ কোর্টে আইন প্র্যাকটিস করছি। লিগ্যাল সার্কেলের অ্যাসোসিয়েটস হিসেবে কাজ করছি। আমার কাছে মনে হয় আইনপেশার পাশাপাশি যদি ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে থাকি তাহলে প্রতিদিন আইন শেখার, শেখানোর মধ্যে থাকতে পারব। এদিকে নর্থ সাউথে পড়াচ্ছি, অন্যদিকে লিগ্যাল সার্কেলে কাজ শিখছি।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান