ঈদে গয়না-কসমেটিক্সের চাহিদা কম

ঈদে গয়না-কসমেটিক্সের চাহিদা কম

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদ মানেই খুশি আর আনন্দ ভাগাভাগি। ঈদ ঘিরে ঘরে ঘরে খাবারদাবারের পসরা থাকলেও বড় আকর্ষণের জায়গাজুড়ে থাকে নতুন পোশাক। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ ঈদের দিন নতুন পোশাক গায়ে জড়ায়। নারীদের ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে চাহিদা থাকে মানানসই গয়না ও কসমেটিক্সেরও। কিন্তু ঈদের মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও রাজধানীর বেশিরভাগ গয়না-কসমেটিক্সের দোকানে বেচাকেনা এখনো তেমন জমে ওঠেনি। রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানী এলাকার শপিংসেন্টার বা বড় মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গয়না-প্রসাধনীর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি নেই। বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, কোনো কোনো দোকানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেচাকেনা কমেছে। গুলশান-বনানীর এসব শপিংসেন্টার ও মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, করোনা মহামারিতে বহু ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ঈদেও পর্যাপ্ত বেচাকেনা না হলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে আগামী দু একদিনের মধ্যে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে পারে, এমন আশা তাদের।
বনানী এলাকার সবচেয়ে বড় বিপণি-বিতান ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট। মার্কেটটির নিচ তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত গার্মেন্টস, কসমেটিক্স, জুয়েলারি, জুতার হাজারো দোকান। রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে মার্কেটটি ঘুরে ঈদ-বাজারের আমেজ মেলেনি। ক্রেতাশূন্য মার্কেটের চারপাশ প্রায় ফাঁকা। দু-চারজন ক্রেতা যদিওবা আসছেন, তাতে বিশাল এ মার্কেটের ক্রেতা চাহিদা মোটেই পূরণ হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় দোকানকর্মীদেরও দেখা গেছে অলস সময় কাটাতে। বনানী সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় (লেভেল-৩) মদিনা জুয়েলার্স। বিকেল তিনটার দিকে ইমিটেশনের গয়না কিনতে দোকানটিতে ঢুকতে দেখা যায় তিন নারীকে। কিন্তু দরদামে বনিবনা না হওয়ায় গয়না না কিনেই তাদের দুজন বেরিয়ে পড়েন। মাকসুদা আক্তার নামের অন্য ক্রেতা এক হাজার ৫০০ টাকায় একটি ইমিটেশনের হার কেনেন। নেন পাথরের কানের দুলও।
এ ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাসায় ব্যবহারের জন্য স্বর্ণের হার রয়েছে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে যাবেন বলে শাড়ির রঙের সঙ্গে মিল রেখে তিনি ইমিটেশনের এ হার কিনেছেন। জানিয়েছেন, এখানে গয়নার দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যেই। মদিনা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের দোকানে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের ইমিটেশনের গয়না রয়েছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে গয়নার বেচাকেনা বেশি হয়। কারণ, বছরের ওই সময়টাতে বিয়ের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে ঈদ ঘিরে তাদের দোকানে বেচাকেনা বাড়েনি। মদিনা জুয়েলার্সের পাশেই স্বর্ণের দোকান মণিমালা জুয়েলার্স। নারীদের নাকফুল থেকে শুরু করে গলার হার সব ধরনের গয়নায় পুরো দোকান সাজানো। দূর থেকে তাকালে সোনালী এক আভা এসে চোখে লাগে। দোকানটিতে প্রায় আধাঘণ্টার মতো অবস্থান করে একজন ক্রেতারও দেখা মেলেনি। এক অবস্থা পর্ণা জুয়েলার্স বা ফাতেমা জুয়েলার্সের মতো দোকানগুলোতেও। মণিমালা জুয়েলার্সের এ দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে স্বর্ণের কিছুটা চাহিদা থাকালেও রমজানে বা ঈদ ঘিরে তা একেবারেই কমে যায়। এরইমধ্যে কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ায় ক্রেতারাও মার্কেটে আসছেন না। বনানী সুপার মার্কেটের নিচতলায় ৩০ বছর ধরে কসমেটিক্সের ব্যবসা করে উর্বশী কসমেটিক্স। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য এখানে বিক্রি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক নূর নবী বলেন, রমজানের আগে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার কসমেটিক্স বেচাকেনা হতো। কিন্তু রোজার মাসে তা কমে ১৫-২০ হাজারে নেমেছে। ঈদ এলেও মার্কেটে আসছেন না ক্রেতারা।
এদিন কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে গুলশান পিংক সিটিতে। বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কটটির প্রায় সব দোকানেই ক্রেতা রয়েছে। দরদাম করে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। এর মধ্যে জামা-কাপড়ের দোকানে বেশি ভিড়। ইফতারের পর ভিড় আরও বাড়ে বলে জানিয়েছেন মার্কেটটির বিক্রয়কর্মীরা।
গুলশান অ্যাভিনিউ থেকে মার্কেটটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে কাপড়ের দোকান ‘ইয়েলো’। শেষ বিকেলে দোকানটিতে ক্রেতাদের ভালোই উপস্থিতি ছিল। দোকানের ব্যবস্থাপক রকিব হাসান বলেন, এবার ঈদে তারা বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে আশা তাদের। মার্কেটের নিচ তলায় (গ্রাউন্ড ফ্লোরে) ইমিটেশনের দোকান আইনস গ্যালারি। হরেক রকমের গয়না সাজানো দোকানে। বিক্রয়কর্মী রাসেল ভূইয়া বলেন, দিনের চেয়ে রাত ১০টার পর বেচাকেনা বাড়ে। সাধারণত বিত্তশালীরা রাতের মার্কেটে আসেন কেনাকাটা করতে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঈদ ঘিরে বাড়তি বেচাকেনা নেই। গুলশান পিংক সিটির চতুর্থ তলায় কসমেটিক্স ক্লাব। বিকেল গড়ালেও দোকানটিতে ক্রেতার দেখা মেলেনি। কথা হয় কসমেটিক্স ক্লাবের ব্যবস্থাপক আনহা আক্তার তানজিলার সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের দোকানে নানা ডিজাইনের গয়না আছে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বেচাকেনা বাড়ে। রোজার দিনে ইফতারের পর ক্রেতারা আসেন। ঈদের বেচাকেনা বেশ ভালো। গুলশান পিংক সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রমজানে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রোববারও মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ২১ থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকবে।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা