দেশে ফিরেই বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসের

দেশে ফিরেই বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসের

বরগুনা সংবাদদাতা : মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের সব কর্মচাঞ্চল্য থেমে গেল হঠাৎ। বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। আবার বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসের। তার গ্রামের বাড়িতে এখন শুধুই শোকের মাতম।

বুধবারই বাড়িতে মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

বুধবার বিকেলে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়। জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন হাদিসুর রহমান (২৯)।

হাদিসুর রহমান বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিস মেজো। বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে হাদিসুর রহমান।

বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘হাদিস ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল মাস ছয় আগে। ’

হাদিসের স্বজনরা জানান, আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করেন হাদিসুর। বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন হাদিসুর রহমান।

ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গোলার আঘাত হানার সময় বড় ভাই বাইরে এসে মুঠোফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পাইনি। আমার ভাই এবার বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল। আমাদের সব শেষ। একমাত্র আয়ের মাধ্যম ছিল আমার ভাই। আমরা কিভাবে বাঁচবো।

এদিকে একমাত্র ছেলে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরা। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা খবরটা জানতে পারেন। হাদিসুরের মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

হাদিসুর রহমানের মা আমেনা বেগম ছেলে হারা শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘গত বুধবার হাদিস আমাকে ফোন দিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়েছি কিনা জানতে চেয়েছে। এরপর সবশেষে গতকাল ভিডিও কলে কথা হয়। এরপর তার রাতে তার মৃত্যুর খবর পাই। আমার ছেলে আমাকে বলছে মা তুমি আমাদের ভাই-বোনদের পুতুলের মতো করে সাজিয়ে তুলে তুমি কোথায় যাবা। মা তুমি না বাঁচলে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ।’

জানা গেছে, বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটে।

More News...

বিড়ি শিল্পের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ