আফগানিস্তানে তালেবান : সুবিধাজনক অবস্থানে চীন-পাকিস্তান, ভারতও কৌশল বদলাচ্ছে

আফগানিস্তানে তালেবান : সুবিধাজনক অবস্থানে চীন-পাকিস্তান, ভারতও কৌশল বদলাচ্ছে

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সম্পর্ক সবসময়ই বেশ ভালো ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে বহুবার। গনি সরকারবিরোধী যুদ্ধে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগও আছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এখন তালেবান প্রায় পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর পাকিস্তানের নানা পর্যায় থেকে ব্যাপকভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তালেবানের আগমনে আফগানিস্তান ‘দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত হলো’।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিভিশনে যে উল্লাস দেখা গেছে তার মূল কারণ আফগানিস্তানের ওপর ভারতের যে প্রভাব গড়ে উঠেছিল তা দূর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়া।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তালেবানের সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজে অংশ নিচ্ছেন পাকিস্তানের কয়েকজন কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, পাকিস্তান চায় আফগানিস্তানে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অন্যদিকে ভারত-চীনের বৈরিতাও চলছে দীর্ঘদিন ধর। ফলে তালেবানের আগমনে সেখানে ভারতের প্রভাব কমবে বলে চীনও খুশি। চীন বলছে, তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো রাখা জরুরি, কারণ, তালেবান জিনজিয়াং অঞ্চলকে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) এর প্রভাবমুক্ত রাখার কাজে সহায়তা করতে পারবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তালেবানের সার্বিক ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রশ্নে চীন আর পাকিস্তানের অবস্থান বাস্তবে এক নয়। পাকিস্তান যেমন আফগানিস্তানকে ভারতবিরোধী অবস্থানে দেখতে চাইবে, চীনের বেলায় এমন দৃষ্টিভঙ্গি অত্যাবশ্যক নয়। চীন সবার আগে চায় জিনজিয়াং অঞ্চলে কোনোভাবেই যাতে সন্ত্রাসবাদ বিস্তার লাভ না করে।

চীনের বিরুদ্ধে মুসলিম নিপীড়ন, বিশেষ করে উইগুরদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানোর সুদীর্ঘ অভিযোগও রয়েছে। বেইজিং এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে সব সময়। তবে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হলেও এ বিষয়টি দুই পক্ষের মধ্যে অস্বস্তি হয়েই থেকে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

আফগানিস্তানে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তালেবানরা জরুরি ভিত্তিতে দুই ধরনের সহায়তা চাইছে। এক, তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক সহায়তা, দুই, অবকাঠামো নির্মাণ এবং সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে অর্থনৈতিক সহায়তা। চীন এই দুই ধরনের সহায়তাই দিতে প্রস্তুত।

১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয় আফগানিস্তানের কান্দাহারে। পাকিস্তানি তিন জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে বিমানের যাত্রীদের ফেরত পেয়েছিল ভারত। অন্যদিকে বিমান ছিনতাইকারীদের নিরাপদে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল তালেবান। আবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে চায় ভারত।

গত ২০ বছর আশরাফ গনি সরকারের পাশে ছিল ভারত। এ সময়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশেই উন্নয়নমূলক নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে দেশটি। কাবুলে জাতীয় সংসদ ভবনও তৈরি হয়েছে ভারতের অর্থায়নে। তবে মোদী সরকারের আশঙ্কা, তালেবান ক্ষমতায় আসায় সমস্ত বিনিয়োগ ‘ভেস্তে’ যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র যখন তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে, তখনো ভারত পুরোপুরি এবং শুধুই আশরাফ গনি সরকারের পাশে থেকে কৌশলগত ভুল করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান একে একে আফগানিস্তানের সব রাজ্য দখলে নিতে শুরু করার পরও যে ভারত তালেবানবিরোধী বক্তব্যে অটল ছিল কূটনৈতিকভাবে তা-ও এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরায় আফগানিস্তানে পাকিস্তান এবং চীনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা স্পষ্টতই উন্মুক্ত। তবে ভারত একটু দেরিতে হলেও পরিস্থিতি বুঝে কৌশল পরিবর্তন করেছে। কাবুলে এক সময় ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জয়ন্ত প্রসাদ মনে করেন, ভারত এখন সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ‘লং গেম’ খেলবে, অর্থাৎ লম্বা সময় নিয়ে চেষ্টা করবে এবং তাতে তালেবানের সঙ্গে একটা সমঝোতার সম্পর্ক গড়া হয়ত সম্ভবও হব।

More News...

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ