দক্ষিণবঙ্গের লঞ্চ চালু হওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমেছে

দক্ষিণবঙ্গের লঞ্চ চালু হওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ কমেছে

রাজবাড়ি প্রতিনিধি : গতকাল ফিরে গিয়েছি, আজ না গেলে অফিসে চাকরি হারাব। অফিস থেকে এস. এম. এসে জানিয়ে দিয়েছিল শনিবারের মধ্যে অফিসে যেতে। চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে অনেকটা পথ এসে গাড়ি না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। গণপরিবহন চালুর ঘোষণায় আজ স্বস্তিতেই অফিসে যেতে পারছি।

কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল থেকে আসা মো. আবু সালেহ। তিনি গাজীপুর মাওনায় এস. এম গ্রুপে চাকরি করেন। তিনি আরও বলেন, যদি শনিবার থেকে গণপরিবহন চালু থাকত তাহলে এত গাদাগাদি করে মানুষকে কর্মস্থলে যেতে হতো না। সরকার একদিকে বলে লকডাউন অন্যদিকে সব খুলে দিয়ে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের বিপাকে ফেলে। আজ যদি আমি অফিসে যেতে না পারতাম তাহলে আমাকে চাকরি হারাতে হতো।

আজ রোববার (১ আগস্ট) থেকে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ঘোষণায় ঈদের ছুটিতে বা কঠোর বিধিনিষেধে আটকে থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখনো রাজধানীতে আসছেন। শনিবার সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে মানুষের জনস্রোত থাকলেও গণপরিবহন চালু হওয়াতে আজ এই চাপ কিছুটা কমেছে।

তবে আজও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে দূরপাল্লার বাসের পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান, নসিমন, অটোরিকশা, মাহেন্দ্র, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে যে যেভাবে পারছে সেভাবে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে নামছেন। এ সময় ক্ষোভে অনেকে লকডাউন নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের তিরস্কার করেন।

দক্ষিণাঞ্চল থেকে লোকজন বিভিন্ন উপায়ে ফেরিঘাটে এসে নামছেন। প্রখর রৌদ্রের মধ্যেই তারা ফেরিতে উঠে পরছেন। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। কিছু সচেতন মানুষকে এক পাসে দাঁড়িয়ে বারবার দুই হাত স্যানিটাইজার করতে দেখা যায়। পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মীদেরও যাত্রীদের সহায়তা করতে দেখা যায়।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ফেরি ভর্তি গাড়ি নিয়ে রো রো ফেরি ভাষা শহীদ বরকত দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরি ঘাটে ভিড়ে। গাড়িগুলো আনলোড করার পর গণপরিবহনের সঙ্গে মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ে।

বিজিবির পক্ষ থেকে বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় ও মাস্ক পরিধানের জন্য বলা হলেও কেউ কেউ তা মানছেন না।

মাথায় ব্যাগ নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে আসা ঢাকাগামী দুই যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিসের লকডাউন? এই যদি হয় লকডাউন তাহলে এত হাজার হাজার মানুষ অসলো কীভাবে? আপনারা লকডাউন দেবেন, আবার গার্মেন্টস খুলে দেবেন। এ সময় ভাষা খারাপ করে সরকারকে গালমন্দ করে বলেন, আমাদের তো যেতেই হবে। এখন যত কষ্টই হোক।’

গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক এনামুল ইসলাম গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে খবর আসে রোববার থেকে গার্মেন্টস খোলা। এই খবর আরও আগে দিতে পারত। রাতের বেলা খবর পেয়ে পরদিন কীভাবে যাব? তারপরও শনিবার যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আজ যাচ্ছি। গণপরিবহন আগে থেকে খুলে দিলে কী হতো?

অপরদিকে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌ রুটে লঞ্চ চলাচল করায় স্বস্তিতেই পার হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছে মানুষ। তবে লঞ্চগুলো ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া যাচ্ছে।

আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর অনেকটা অসহায়ের সুরে বলেন, এত মানুষ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? তারপরও আমাদের পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার চেষ্টা করছেন।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভাই আমরা খুব বিপদে আছি। অনেক কিছু বলতে পারছি না। মাঝেমধ্যে এমন কিছু নির্দেশনা আসে, আমরা এখন কোন দিকে যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। এ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। তারপরও যত দূর সম্ভব ফেরি চালাচ্ছি। দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌ রুটে ছোট বড় মিলে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?