ব্যাঙের জাদুঘর

ব্যাঙের জাদুঘর

অনলাইন ডেস্ক : একটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে উপেক্ষা করেই দুষ্টুমিতে মত্ত। রোলার দিয়ে একজন আরেকজনকে খোঁচা দিচ্ছে। চলছে নাকে পেনসিল রাখার প্রতিযোগিতা। অনেকে আবার অন্যের নোট খাতা কেড়ে নিচ্ছে। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষক। এরই মাঝে এক বাবা তার ডানপিটে সন্তানকে জোর করে স্কুলে নিয়ে এসেছেন। ক্রোয়েশিয়ার একটি জাদুঘরে এ দৃশ্যের দেখা মিলবে। তবে এ চিত্রের কেউ মানুষ নয়, একেকটি মৃত ব্যাং। এগুলো ১০০ বছরের বেশি সময় আগে মারা গেছে। এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে যাতে মনে হবে জীবিত ব্যাং। এ জাদুঘরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রগিল্যান্ড’ বা বাংলায় বললে ব্যাঙের দেশ।

মানুষের জীবনে যেসব নীতিকথা মেনে চলতে হয়, সেগুলোর সহজ উদাহরণ দিতে প্রাণীকে বেছে নিয়েছিলেন গ্রিক পণ্ডিত ঈশপ। জঙ্গলের প্রাণীদের নিয়ে বানানো গল্পকে উপজীব্য করে তিনি মানুষকে নীতিকথার দিকে ডেকেছেন। এসব গল্পকে বলা হয় ‘ঈশপের গল্প’। সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রয়েছে এই কাল্পনিক জীবনচিত্র।

ঈশপের দেখানো পথে না হাঁটলেও তার একটি অংশ বেছে নিয়েছেন হাঙ্গেরির চর্মবিদ্যা বিশারদ ফেরেন্স মেরে (১৮৭৮-১৯৪৭)। তবে কাল্পনিক কোনো গল্পের অবতারণা কিংবা নীতিকথার দিকে টেনে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না তাঁর। তাই বাস্তব একটি দুনিয়া দেখানোর উদ্যোগ নেন। তিনি বেছে নিয়েছিলেন লেজবিহীন উভচর প্রাণী ব্যাংকে। তবে জীবিত ব্যাং দিয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা কঠিন কাজ।

এমনকি বিলিয়ার্ড খেলার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে ব্যাঙের জাদুঘরে

তাই ব্যাং ধরে মারতে শুরু করেন ফেরেন্স। এ ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন তিনি। প্রতিটি ব্যাঙের মাথার দিকে কর্ক ঢুকিয়ে মারা হতো যাতে করে দেহের কোনো ক্ষতি না হয়। এর পর এক ধরনের রাসায়নিকে সংরক্ষণ করা হতো। এভাবে ১০ বছরে প্রায় ১ হাজার ব্যাং জমা করেন তিনি। তারপর সেগুলোকে এমনভাবে একটি ডায়াগ্রামে সাজান যাতে করে মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দৃশ্য ফুটে ওঠে।

মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে যা যা করে, তার কিছু খণ্ডচিত্র দেখা যাবে এসব ডায়াগ্রামে। স্কুলে ক্লাস চলছে, কয়েকজন বন্ধু একত্রে বসে তাস খেলতে খেলতে সিগারেট ফুঁকছে, অনেকে বসে মদ খাচ্ছে, কেউ কেউ বিলিয়ার্ড খেলছে কিংবা সুইমিংপুলে ডাইভ দিচ্ছে। রয়েছে চিত্রগ্রাহক, চিকিৎসক ও নৌকার মাঝিও। সার্কাস দেখিয়ে বিনোদন দিচ্ছে একদল। দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যাবে। ডায়াগ্রামে দেখা মিলবে বিভিন্ন পেশার। দেখা যাবে, কাঠ কেটে আসবাব বানাচ্ছে এক দল মিস্ত্রি। কাঠমিস্ত্রির পাশাপাশি চোখে পড়বে রাজমিস্ত্রির দিকেও।

১৯২৭ সালে বর্তমান সার্বিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘর দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার আইভান মেডভেসেক নামক এক ব্যক্তির কাছে। ৫০ বছর আগে তাঁর বাবা এগুলো কিনে সংরক্ষণ করে রাখেন। প্রতিদিন উৎসুক দর্শক চমৎকার এ দৃশ্যগুলো দেখতে আসেন। ২০১৯ সালে জাদুঘরটিতে এসেছিল প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক। তাদের মধ্যে স্থানীয়দের সংখ্যা কম। ‘তাদের কাছে ব্যাঙের চিত্র দেখার চেয়ে ব্যাং খাওয়াটা বেশি আনন্দের’—আশপাশের মানুষদের নিয়ে মজা করে এমনটাই বলছিলেন মেডভেসেক।

তবে করোনার কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিনিয়োগকারীর কাছে ২১টি ডায়াগ্রামের সবগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন মেডভেসেক। অচিরেই সেগুলো চলে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নিরাপত্তায় থাকা কোনো হলরুমে। হাজার হাজার চোখ তাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। মমির মতো ব্যাঙগুলো শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দেবে। নীরবে আন্দোলিত করবে বিমর্ষ চিত্তকে।

 

More News...

বিনামূল্যে চিকিৎসা মেলে ‘ফ্রি স্ট্রোক ক্লিনিকে’

বিয়ে করতে এনে প্রেমিকাকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করলেন প্রেমিক