নবজাতকের থাইরয়েড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি

নবজাতকের থাইরয়েড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষের বিভিন্ন রকম থাইরয়েড সমস্যা আছে। কিন্তু এদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানে না তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। এই অবস্থায় থাইরয়েডের লাগাম টানতে নবজাতক জন্মের পর দ্রুত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সন্তান গ্রহণের পূর্বেও নারী-পুরুষের থাইরয়েড পরীক্ষায় বিষয়েও সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর একটি অডিটোরিয়ামে বিশ্ব থাইরয়েড সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, গর্ভধারণের আগে প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর উচিত একটি সুন্দর পরিকল্পনা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। এতে করে থাইরয়েডসহ বিভিন্ন জটিল রোগ থেকেই সন্তান মুক্তি পেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর অসংখ্য শিশু থাইরয়েড নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এক্ষেত্রে জন্মের পরপর তার শনাক্তকরণ জরুরি। এজন্য আমি মনে করি সরকারিভাবেই দেশে নিউনেটাল স্ক্রিনিং টেস্ট বাধ্যতামূলক করা উচিত।

ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, থাইরয়েড সরাসরি সন্তানের ব্রেন ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত। যে কারণে এটি নিয়ে যতো সময় ক্ষেপণ হবে, চিকিৎসায় যতো দেরি হবে, ততোই সমস্যা বাড়বে। পরীক্ষার মাধ্যমে যদি দ্রুততম সময়ে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা সেটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে আনতে পারি।

কারণ ও করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থাইরয়েডের অন্যতম কারণ আয়োডিন। আমরা যে লবণ খাই, সেই লবণে আয়োডিন ঠিক আছে কিনা এটা যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যারা লবণের মান নির্ণয়ে থাকেন, তারা যেন কোন লবণে আয়োডিন আছে, কোনটাতে নাই সেটা সুস্পষ্ট করে নিয়মিত সরকারকে আপডেট জানায়। এরপর সে অনুযায়ী সরকারকেও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে জাতির জন্য আয়োডিনের একটা স্ট্যান্ডার্ড মাত্রা ঠিক করতে হবে।এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে আয়োডিনের অভাব নাই, যে কারণে সেই দেশগুলোতে থাইরয়েড রোগী প্রতি চার হাজার জনে মাত্র একজন। আর আমাদের দেশে প্রতি ২০০ জনে একজন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যেকোনো সময়ে যেকারো রোগটি হতে পারে। একবারও হতে পারে, আবার একাধিকবারও হতে পারে।

থাইরয়েড সমস্যা মূলত দেখা দেয় আয়োডিনের অভাবে। এছাড়াও হেলদি ডায়েট, সেলেনিয়াম, জিংকের অভাব এবং চেইন স্মোকারদেরর থাইরয়েডের ঝুঁকি বেশি। তবে কারও দেহে পর্যাপ্ত আয়োডিন থাকলে এমনিতেই ঝুঁকি কমে যায়।

সচেতনতায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, শহর এলাকায় রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলেও এখন ২০-৩০ শতাংশ মানুষের থাইরয়েড। বাঁচতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে। ২০১৩ সাল থেকেই আমাদের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সভা, সেমিনার, টেলিভিশনে কথাবার্তা বলছি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, থাইরয়েড হলো একটি হরমোনজনিত রোগ। দেশের প্রায় ৩ কোটি ৭ লাখ মানুষ কোন না কোন ভাবে থাইরয়েডে আক্রান্ত। এই থাইরয়েডের কারণে অসংখ্য মায়ের সন্তান হচ্ছে না। বিভিন্ন চিকিৎসা ও পদ্ধতিতে সন্তান হলেও সেটি হচ্ছে হাবাগোবা, যা পরিবারের সম্পদ না হয়ে পরিণত হচ্ছে সমাজের বোঝা হিসেবে।

পরীক্ষায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, যারা সন্তান নিতে চান, গাইনি চিকিৎসকদের কাছে গেলেই তারা প্রত্যেককে থাইরয়েড ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। সেখান থেকে ফলাফল ভালো হলেই তাদেরকে সন্তান গ্রহণের জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দেন। তবে অনেকক্ষেত্রেই জন্মগত থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যদি নবজাতক জন্মের ৭-১০ দিনের মধ্যে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে শিশুটিকে সহজেই সুস্থ করে তোলা যায়। আর যদি জন্মের একমাসের মধ্যেও ধরতে পারা না যায়, তাহলে সন্তান নিশ্চিত হাবাগোবা হয়ে যায়।

বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিসে দেশে ৭০ হাজারের মতো মৃত্যু, করোনায় ৩০-৩৫ হাজার। তারমানে ডাবল। কিন্তু মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে খুব বেশি ভাবে না। কারণ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

থাইরয়েডে মৃতের হার খুবই কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তারা বলেন, থাইরয়েডের বিভিন্ন কমপ্লিকেশন হয়ে থাকে, যে কারণে মারা গেলে মৃতের সংখ্যাটা সেসব রোগের মধ্যে চলে যায়। বিশেষ করে হার্টের সমস্যা দেখা দিলে মৃতের পরিসংখ্যানটা কিন্তু থাইরয়েডজনিত মৃত্যুতে আসে না।

প্রসঙ্গত, থাইরয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকের উঁচু হাড়ের নিচে অবস্থিত। গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতি সদৃশ এবং এটি ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীকে পেঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রূণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা একান্ত জরুরি।

More News...

ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে, স্টেশনে ভিড়

দ্বীপ উন্নয়ন-কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করতে সংসদকে হাইকোর্টের পরামর্শ