সরিষাবাড়ীতে টাকার বিনিময়ে বয়স্ক বিধবা ভাতার কার্ড করে দেন নামধারী আ.লীগ নেতা

সরিষাবাড়ীতে টাকার বিনিময়ে বয়স্ক বিধবা ভাতার কার্ড করে দেন নামধারী আ.লীগ নেতা

শাকিল আহম্মেদ ,সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি:  জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আ.লীগ নামধারী দুই স্থানীয় নেতা টাকার বিনিময়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও (যত্ন প্রকল্প) মা ও শিশুর কার্ড এবং গর্ভবতীদের কার্ড করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পুঠিয়ার পাড় এলাকায় মৃত কাজেম মুন্সীর ছেলে মোঃ লেবু মিয়া (৫০) ও মৃত কামিল্লা মজিবরের ছেলে হাতেম আলী(৫২) এবং স্থানীয় মেছের আলীর স্ত্রী কল্পনা বেগম (৩৫) গ্রামের ১২-১৫ জন নিরিহ মানুষের কাছ মোটা অংকের টাকা নিয়ে বয়স্ক, বিধবা, গর্ভবতীর কার্ড করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে অনেকই তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারায় সরকারের বিনামূল্যে দেওয়া ভাতার কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনো ভাতার পুরো টাকা, কখনো অগ্রিম টাকা, কখনো বা ভাতার টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন ওই স্থানীয় নেতা লেবু, হাতেম এবং কল্পনাকে৷ তবে টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে হেনস্তার শিকার কিংবা কার্ড বাতিলের হুমকি দেন উপকারভোগীদের। আবার যাদের কার্ড হয়নি এমন ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনে কথাবার্তা শুনিয়ে দেন তারা।ভুক্তভোগী হামিদা বেওয়া বলেন, লেবু বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ৮০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তার চাওয়ার ইচ্ছা মত ৫,০০০ হাজার টাকা দিতে পারিনি বলে কার্ড হয়নি। এখন ৮০০টাকা ফেরত চাইলে বলে ঐ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী আব্দুল হক বলেন, আমার কাছ থেকে লেবু বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ২,০০০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন সেই টাকা ফেরত দেয় না।উপকারভোগী হোবাহান বেপারী বলেন, সরকার আমা’গোরে কার্ড এমনেই দিছে তার পরও কল্পনা বেগমেকে ৭,০০০ হাজার টাকা দিয়া কার্ড করতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করায় এক মহিলা অভিযোগ করে বলেন, বিধবা, বয়স্ক ও গর্ভবতীদের কার্ড করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় কল্পনা বেগম সব সময় এলাকার মধ্যে ঘোরা ফেরা করেন। আমার ভাইয়ের মেয়ের শিশু কার্ডের জন্য ৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন কিন্তু কার্ড হয়নি। অনেক দিন তাদের পিছনে ঘুরার পর টাকা ফেরত পেয়েছি। তাছাড়া তারা কয়েক’জন মিলে টাকার বিনিময়ে চাউলের কার্ডসহ সব ধরনের কার্ড করে দেন। গ্রামের সবাই জানেন তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের বিভিন্ন ধরনের কার্ড করে দেন। কিন্তু কেউ তাদের ক্ষমতার ভয়ে কিছুই বলতে পারে না।এদিকে আরেক ভুক্তভোগী সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার বাচ্চার শিশু ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ২,২০০টাকা নিয়েছে লেবু এবং হাতেম। কিন্তু আমার বাচ্চার কোন কার্ড করে দেয়নি। এখন আমি টাকা ফেরত চাইলে বলে তোমার ২,২০০ টাকার সাথে আমার আরো ৮০০ টাকা যোগ করে ৩’হাজার টাকা জমা দিয়েছি। সেই বাকী টাকা আরো দাও আমাকে। শুধু তাই নয় এই এলাকার অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন যেমন- মমতা, সুরমলা, আনোয়ারা, হামিদা, বাহাতন, হরেন্দ্র, রওশনারাসহ আরো অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে। আমরা এলাকাবাসী এই নামধারী প্রতারকদের সঠিক শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কল্পনা বেগম বলেন, এসব অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা বানোয়াট। চেয়ারম্যান আমাকে দুই একটা ভাতার কার্ড দেয় সেটা আমি গরিব মানুষকে করে দেই কোন টাকা নেই না।
অভিযুক্ত লেবু মিয়া কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নামধারী দলীয় কোন নেতা নয়। আমি অসুস্থ মানুষ এমন ধরনের কাজ আমি করিনি। কাউকে কার্ড করে দেওয়ার জন্য কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা বলেছেন। এদিকে অভিযুক্ত হাতেম আলীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়’নি।
এদিকে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এলাকার কেউ এখনও আমাকে কিছু বলেনি। আর মানুষ কেন যে টাকা দেয় সেটা আমার জানা নেই। আমি যেসব কার্ড করেছি দিয়েছি সেটা এমনিতেই করে দিয়েছি টাকার বিনিময়ে নয়।
এ বিষয়ে পোগলদিঘা ইউপি চেয়ারম্যান সামস উদ্দিন জানান, টাকার বিনিময়ে ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে এব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে এরকম কোন অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

 

More News...

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বই আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক: টিটু

আমি নগরবাসীর প্রতি চির কৃতজ্ঞ : নবনির্বাচিত মেয়র ইকরামুল হক টিটু