১১০ কিমি. রিকশা চালিয়ে হাসপাতালে বাবা, মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ডিসি

১১০ কিমি. রিকশা চালিয়ে হাসপাতালে বাবা, মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ডিসি

রংপুর ব্যুরো : অদম্য পিতা তারেক ইসলাম (৩৪)। অসুস্থ ৭ মাস বয়সী শিশুসন্তানের জীবন বাঁচাতে ঠাকুরগাঁও থেকে ১১০ কিলোমিটার পথ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে ৯ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে এসেছেন।

অভাবি রিকশাচালক পিতার আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তিনি করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন চলায় অ্যাম্বুলেন্স খরচ জোগাতে পারেননি। তাই তার এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে নিজের জীবিকার বাহন রিকশা চালিয়ে। এই পথ পাড়ি দেয়ার মানবিক গল্প হার মানিয়েছে সমস্ত মানবিকতাকে।

সেই শিশু জান্নাতের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ের জন্য হাত বাড়িয়েছেন রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।

রোববার দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা অসুস্থ শিশুটিকে দেখতে যান। এ সময় তিনি জানান, জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান শিশুটির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করবেন। এ সময় তিনি শিশুটির মায়ের হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন।

মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিয়মিত শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা করা হবে।

রোববার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে কথা হয় তারেক ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, শনিবার সকাল ৬টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ১১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে বেলা সোয়া ৩টায় তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান।

অদম্য পিতা জানান, তার সাত মাস বয়সী শিশু জান্নাতের পেটের নাড়ি উল্টে যাওয়াতে গত ১৩ এপ্রিল রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঠাকুঁরগাও সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করানোর পর চিকিৎসক একদিন দেখার পর জান্নাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে রেফার্ড করেন। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। চারদিন ধরে কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে নিজে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে রংপুরে আসেন তিনি।

তিনি বলেন, এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে রংপুরের তারাগঞ্জের দিকে এসে রিকশার চার্জ শেষ হয়ে যায়। পরে এক অটোচালক আমার সন্তানের চিকিৎসার কথা শুনে আমাকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গন্তব্য পৌঁছার জন্য বাধ্য হয়ে ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা রিকশাটা ঠেলে নিয়ে আসি। পথিমধ্যে আরেকটা গাড়ি আমাকে মেডিকেল পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করেন। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছি।

শিশুটির পর্যবেক্ষণ শেষে অপারেশন করা লাগতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু অপারেশন করার মতো টাকা তার কাছে নেই। এমনকি চিকিৎসকের লিখে দেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ, স্যালাইন, ইঞ্জেকশন কেনার জন্য কোনো টাকাও নেই তার কাছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে তারেক ইসলাম। তিনি ১২ বছর বয়সেই রিকশা প্যাডেল ঘুরিয়ে বাবার সংসারের বোঝা সামলানোর যুদ্ধ শুরু করেন। সংসার জীবনে তার স্ত্রীসহ ৯ বছর ও ৩ বছর বয়সী আরও দুই মেয়েসন্তান রয়েছে।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান